হাইড্রোপনিক ঘাস
হাইড্রোপনিক ঘাস কি:
মাটি ছাড়া শুধু মাত্র পানি ব্যবহারকে ঘাস চাষ করাকে হাইড্রোনিক ঘাস বলে। দেশে
জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। অপরদিকে
বিপুলসংখ্যক জনগোষ্ঠীর প্রাণিজ আমিষের চাহিদা মেটাতেও মেধাবী জাতি গঠনে প্রচুর পরিমাণ দুধ ও মাংস উৎপাদন করা প্রয়োজন। দুধ ও মাংস
উৎপাদন করতে হলে গাভীর জন্য প্রচুর পরিমাণে কাঁচা ঘাসের প্রয়োজন। আমাদের
দেশের অনেক খামারির ঘাস চাষের জমি নেই এবং আবার কিছু খামারি আবাদি জমিতে ঘাস চাষ করতে ও চান না। অথচ প্রতি
৩০০
থেকে
৪০০
কেজি
ওজনের একটি গাভীকে দৈনিক ১৫ থেকে ২৫ কেজি কাঁচা ঘাস দিতে হবে। হাইড্রোপনিক
পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করতে জমির প্রয়োজন হয় না তাই ইচ্ছা করলেই সব খামারি খুব সহজেই এ পদ্ধতিতে ঘাস চাষ করে গরুকে খাওয়াতে পারেন। এ ঘাস বাজারের
দানাদার ও মাঠের সবুজ ঘাসের প্রায় সব পুষ্টি উপাদান বিদ্যমান। তাছাড়া
উৎপাদন খরচও খুবই কম। (প্রতি
কেজি
১.৫০-২.০০ টা.)
চাষের স্থান :
ঘরের ছাদ, ঘরের ভেতরে, নেটহাউস, পানির টানেল, বারান্দা, খোলাজায়গায়, প্লাস্টিকের বালতি, পানির বোতল, মাটির পাতিল, ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়।
ব্যবহৃত বীজ :
ভুট্টা, গম, ছোলা, সয়াবিন, খেসারি, মাষকলাই এবং বার্লি।
চাষ পদ্ধতি
বীজ ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে।
পানি ঝরিয়ে ভেজা চটের বস্তা বা কালো সুতির কাপড়ের ভেতরে বেঁধে ২৪ ঘণ্টা অন্ধকারে রাখতে হবে।
একপাশ ছিদ্রযুক্ত কাঠ, টিন বা প্লাস্টিকের ট্রেতে ওই বীজ বিছিয়ে
কালো
কাপড়
দিয়ে
দুই
দিন
ঢেকে
রাখতে হবে, যেন বাইরের আলো-বাতাস না লাগে। কাপড়
সারাক্ষণ ভেজা রাখতে হবে।
তৃতীয় দিন কাপড় সরিয়ে আধা ঘণ্টা পর পর পানি ছিটিতে হবে। একটি
ঘরে
বাঁশ
বা
কাঠের তাক বানিয়ে ট্রেগুলো সাজিয়ে রাখতে হবে।
৯ দিন পর ৭ থেকে ৮ কেজি কাচা ঘাস পাওয়া যাবে। ৫ বিঘা
জমিতে যে ঘাস উৎপাদন
হয়
তা
মাত্র ৩০০ বর্গফুট টিন শেড ঘরে সমপরিমাণ ঘাস উৎপাদন করা সম্ভব।
হাইড্রোপনিক ঘাসের উপকারিতা
সবুজ ঘাস উৎপাদনের দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।
স্বল্প জায়গায়, অল্প পরিসরে অধিক ঘাস উৎপাদন করা যায়।
আঁশ জাতীয় খাদ্যের শতকরা ৪০ থেকে ৫০ ভাগই হাইড্রোপনিক ঘাস খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়। ১০ থেকে
১৫
ভাগ
দুধ
উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। দুধের
ফ্যাট ও এস এন এফ শতকরা ০.৩ থেকে ০.৫ ভাগ বৃদ্ধি পায়।
এ ঘাস শতকরা ৯০ ভাগ হজমযোগ্য পক্ষান্তরে এই বীজের দানাদার খাবার মাত্র শতকরা ৪০ ভাগ হজমযোগ্য।
রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার নেই।
এ ঘাসে দানাদারের চেয়ে ১০ থেকে ২০ গুণ বেশি পরিমাণের ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি বিদ্যামান।
গর্ভধারণের হার বৃদ্ধি পায় কারণ এ ঘাসে ভিটামিন ই সেলিনিয়াম, ভিটামিন এ পর্যাপ্ত পরিমাণে বিদ্যমান।
শতকরা ২৫ ভাগের অধিক ঘাসের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
এ ঘাস আঁশ উদ্ভিজ আমিষ, নানাবিধ ভিটামিন ও খনিজ লবণের উৎস।
এ ঘাস সারা বছরই চাষ করা যায়। মাটিবাহিত
রোগ
হবে
না। কীটপতঙ্গ আক্রমণের সম্ভাবনা নেই তাই কীটনাশক ব্যবহার করার প্রয়োজন পড়ে না।
দানাদার খাবারে যে এন্টিনিউট্রিশনাল ফ্যাকটস হিসেবে ফাইটিক এসিড থাকে সেটাকে দূরীভূত করে রুমেনের চঐ কমায় ফলে শরীরের ইমিউনিটি ও উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ে।
পরিকল্পিতভাবে চাষ করা যায় (ছোট/বড়)।
এটি লাভজনক ও মানসম্পূর্ণ ফসল।
অধিক রসালো ও পরিপাচ্য হওয়ার কারণে দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।
এটি অধিক পরিবেশ উপযোগী।