শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন ও দৈনন্দিন পরিচর্যা


শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন দৈনন্দিন পরিচর্যা

শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন ও দৈনন্দিন পরিচর্যা


শিশুদের ত্বক খুবই স্পর্শকাতর হওয়াতে শীতকালে শিশুদের নরম ত্বক জলীয়বাষ্প হারিয়ে ফেলে শুষ্ক রুক্ষ হয়ে ওঠে তার সাথে দেখা দেয় নানাবিধ সমস্যা তাইতো আমাদের ছোট্ট সোনামনিদের শীতের শুষ্ক রুক্ষ পরিবেশে ত্বকের জন্য চাই বিশেষ যত্ন এই শুষ্ক মৌসুমে শিশুর বাবা মাকে থাকতে হবে বিশেষ সতর্ক আর মূল কথা হলো শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন নিতে বাড়তি প্রস্ততির কোন বিকল্প নেই শীতে শিশুর ত্বকের কোমলতা ময়েশ্চারাইজার এর ভারসাম্য ঠিক রাখা আসলেই একটি বড় চ্যালেঞ্জ মনে রাখবেন শিশুর ত্বক যেমন বড়দের ত্বক থেকে ভিন্ন ঠিক তেমনি শিশুর ত্বকের যত্ন নেয়ার পদ্ধতিও ভিন্ন আসুন জেনে নেয়া যাক কিভাবে শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন নিয়ে শুষ্কতা, রুক্ষতা চর্ম রোগের হাত থেকে রক্ষা করা যায়

আসলে শীতে শিশুর ত্বকের যত্ন তার দৈনন্দিন পরিচর্যার বিষয় গুলোর মধ্যেই একটু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করে সেরে ফেলা সম্ভব আর এটা বাস্তবায়ন করতে পারলে শিশুর ত্বক থাকবে কোমল এবং আপনি থাকবেন নিশ্চিন্ত আশাকরি নিচের বিষয় গুলো পড়ে আপনি পেয়ে যেতে পারেন শীতে শিশুর ত্বকের সমস্যার সমাধান

শীতে শিশুর গোসল

শীতকালে শিশুকে গোসল করাতে হবে হালকা গরম পানি দিয়ে কেননা ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করালে যেমন ঠান্ডা লেগে যাবার ভয় থাকে পাশাপাশি বেশি গরম পানি দিয়ে গোসল করালেও ত্বকের আর্দ্রতা হারিয়ে যায় সুতরাং শিশুর ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ঠান্ডার হাত থেকে রক্ষা করতে গোসলে ব্যবহার করুন কুসুম গরম পানি তবে শীতকালে বছরের কম বয়সি শিশুকে প্রতিদিন গোসল করানোর প্রয়োজন নেই এক্ষেত্রে এক দিন পর পর গোসল করালেই শিশুর ত্বক ভালো থাকবে

শিশুর ত্বকোপযোগী সাবান

শিশুর গায়ে সাবান ব্যবহারে অনেক সতর্ক থাকুন কারন শিশুদের ত্বক বড়দের তুলনায় গুণ পাতলা আর সাবান দিয়ে গোসল করালে সাবান যেন ময়েশ্চারসমৃদ্ধ শিশুর ত্বকের উপযোগী হয় যে সাবানের পিএইচ মাত্রা শিশুর ত্বকের পিএইচ মাত্রার সমান, সে রকম সাবান শিশুর ত্বকের জন্য উপযোগী সেই সাথে তার শরীর পরিস্কারে অবশ্যই বেবি সোপ ব্যবহার করুন এবং কিছুতেই বড়দের সাবান লাগানো যাবেনা কারন বড়দের সাবানের উপাদান তার ত্বক আরো বেশি শুষ্ক করে ফেলে শিশুর ত্বকে ্যাশ, অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে

শিশুর ত্বক উপযোগী তেলের ব্যবহার

শিশুদের দেহে তেলের ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সব ধরনের তেল শিশুদের জন্য উপযোগী নয় বাচ্চাদের মাথার ত্বকে এক্সট্রা ভার্জিন গ্রেড নারকেল তেল অল্প পরিমাণে ব্যবহার করতে পারেন তাছাড়া শিশুকে নিয়মিত অলিভ অয়েল দিয়ে মাসাজ করতে পারেন শিতকালে শিশুর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা অত্যন্ত জরুরি এক্ষেত্রে অনেক কার্যকরী উপাদান হোয়াইট সফট প্যারাফিন বা ফসপোলিপিড সমৃদ্ধ ময়েশ্চারাইজার শিশুর ত্বকের জন্য উপকারী শিশুকে অলিভ অয়েল বাথও দিতে পারেন ক্ষেত্রে এক বালতি পানিতে পাঁচ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে নিন এতেও শিশুর ত্বক নরম হবে ছাড়া গোসলের পরও ভেজা ত্বকে অলিভ অয়েলের সঙ্গে সামান্য পানি মিশিয়ে শিশুর শরীরে ম্যাসাজ করে লাগান ভালো ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে সবচেয়ে ভালো হয়, যদি লিনোলেইক অ্যাসিড-সমৃদ্ধ তেল ব্যবহার করা যায় এটি একধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড, যা ত্বকের সুরক্ষা দেয় সূর্যমুখী তেলে এটি বেশি থাকে যাদের একজিমা আছে, তাদের অলিভ অয়েল ব্যবহার না করাই ভালো

লক্ষণীয় ত্বকের রোগ
সাধারনত এক বছরেরও কম বয়সি শিশুদের ইনফ্যানটাইল সেবোরিক ডার্মাটাইটিস নামের এক ধরনের ত্বকের রোগ হয়ে থাকে এসময় শিশুদের মাথায় অনেক খুশকি হয় সেই সাথে গলায়, বগলে, থাইয়ের খাঁজে, ন্যাপি এরিয়ায় লাল লাল দাগ হতে পারে অনেক সময় চামড়া উঠতে শুরু করে মাঝেমধ্যে রস বের হয় সমস্যা দূর করতে শিশুর মাথায় চুলে নিয়মিত নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল লাগান নবজাতকের মাথায় দুই থেকে তিন মাস তেল বা অলিভ অয়েল লাগালে এর নিরাময় হয় আর ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে কিটোকোনিজল বা জিঙ্ক পাইরেথিওনসমৃদ্ধ শ্যাম্পু দিয়ে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার শিশুর চুল পরিষ্কার করুন
শীতের রুক্ষ আবহাওয়ার কারণে শিশুর ত্বক অনেক সময় অতিরিক্ত শুষ্ক হয়ে যায় তখন একজিমার মতো সমস্যাও দেখা দিতে পারে বারবার হাঁচি হতে পারে, যাকে বলা হয় অ্যালার্জিক রাইনাইটিস যা শিশুদের মধ্যে বংশগতভাবেও হয়ে থাকে ত্বকে প্রদাহ হলে শিশুরা প্রায়ই আক্রান্ত জায়গাগুলো নখ দিয়ে চুলকায় ফলে চামড়া উঠে যায় এজন্য শিশুর নখ নিয়মিত কেটে রাখুন আর ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে মলমজাতীয় ওষুধ আক্রান্ত স্থানে প্রয়োগ করুন

শীতে শিশুর পোশাক

শিশুর কাপড়চোপড় সাবান দিয়ে ধোয়ার পর পরিষ্কার পানিতে বারবার চুবিয়ে সম্পূর্ণ সাবানমুক্ত করে শুকানো উচিত কারণ, সাবানের ক্ষারযুক্ত শুকনো কড়কড়ে কাপড় শিশুর নরম ত্বকের ক্ষতি করতে পারে সেইসাথে শিশুর পরিধেয় পোশাক অবশ্যই নরম মসৃণ হতে হবে শিশুর পোশাক খসখসে অমসৃণ হওয়া উচিত নয় বরং সুতির হওয়াই বাঞ্ছনীয় কারণ, ত্বকের জন্য সুতির কাপড়ই সবচেয়ে নিরাপদ শীতকালে গরম কাপড়ের নিচে অবশ্যই একটি সুতি জামা পরাবেনশীতের পোশাকের নিচে হালকা সুতির পোশাক পরানো হলে শিশু স্বস্তি পাবে

বর্জনীয় বিষয়

শিশুর শরীরের সরিষার তেল মাখাবেন না, সরিষার তেল শিশুর ত্বকের জন্য উপযোগী নয় কারণ এই তেল মাখলে ত্বক চিটচিটে হয়ে যায় ফলে ধুলাবালি সহজে ত্বকে আটকে যায় আবার ঘন বলে এই তেল লোমকূপ বন্ধ করে দিয়ে সংক্রমণও ঘটাতে পারে সরিষার তেল থেকে ফুসকুড়ি বা প্রদাহ হতে পারে সরিষার তেল মাখিয়ে বাচ্চাকে রোদে রাখার যে প্রচলিত রীতি আছে তা একেবারেই অনুচিত এতে ত্বকের পিগমেন্টেশন বেড়ে যায় এবং শিশু কালো হয়ে যায় শিশুদের আদৌ তেল মাখার প্রয়োজন আছে কি না, নিয়েও বিশেষজ্ঞদের মাঝে মতের ভিন্নতা আছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, খুব ছোট শিশুদের, অর্থাৎ নবজাতকদের শরীরে তেল মাখালে তা লাভের চেয়ে ক্ষতিই করে বেশি গবেষকেরা দেখিয়েছেন যে গায়ে তেল মাখেনি এমন বাচ্চাদের ত্বক বেশি মজবুত আসলে আমাদের ত্বকের ওপরের পাতলা আবরণের নিচেই চর্বি বা ফ্যাটের স্তর থাকে তেল মাখলে এই চর্বির স্তর পাতলা হয়, অর্থাৎ সুগঠিত হয় না এর ফলে শিশুর শরীর সহজে শীতল হয়ে পড়তে পারে ছাড়া ত্বকে সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়তে পারে একটু বড় বাচ্চাদের অবশ্য তেল মাখা যাবে

Post a Comment

Previous Post Next Post