King Bhallal Sen's Dighi or Rampal Dighi রাজা বল্লাল সেনের দিঘী বা রামপালের দিঘী
বল্লাল
সেন ধার্মিক (প্রচুর মন্দির গড়েন) এবং মাতৃভক্ত ছিলেন। প্রজাদের পানীয় জলের কষ্ট দুর করতে চাইলেন। পরামর্শদাতার নাম রামপাল (রামপাল, পঞ্চবটি এই সব ঐতিহাসিক
গ্রামগুলো এখনো টিকে আছে)। রাজা বল্লাল
সেন ঘোষনা দিলেন একরাতের মাঝে তার মা যতোটা রাস্তা
পায়ে হাটতে পারবেন উনি ততোবড় দীঘি খনন করবেন। রাজা ভেবেছেন বৃদ্ধা মা কতোটুকু আর
হাটতে পারবে। রাতে রাজমাতার হাটা দেখে বল্লাল সেনের চক্ষু চরকগাছ। উনি হন হন করে
হাটা শুরু করে বিশাল এলাকা ক্রস করে ফেললেন। ছলনার মাধ্যমে বল্লাল সেন মায়ের পথরোধ করলেন। পরে বিশাল এলাকা খনন করলেন। কিন্তু মায়ের সাথে ছলনার ফলে দিঘিতে পানি আসে না। বল্লাল সেনের প্রেস্টিজ শেষ প্রজাদের সামনে। মন্ত্রি রামপাল জানালেন দিঘিতে প্রান বিসর্জন দিলে পানি আসবে (দিনাজপুরের রাম সাগরের গল্পটাও অবিকল)। রাম সাগরের
রাজা রাম নিজের প্রান বিসর্জন দিয়েছিলেন। বল্লাল সেনও তাই করতে গেলেন। কিন্তু রামপাল তার বন্ধুকে খুব ভালোবাসতেন। তাই বন্ধুকে ফাঁকি দিয়ে নিজের প্রান বিসর্জন দিলেন।
বল্লাল
সেনের দিঘী এখনো আছে। কিন্তু এখন আর দিঘি বলে
চেনা যায় না। বিশাল একটা নিচু জায়গা। ধুমায় চাষ বাস হচ্ছে। তবে বর্ষায় নাকি পুরো দিঘিতে পানি থাকে।
সেন
বংশের শেষ হলো কিভাবে? রাজা বল্লাল সেন (মনে হয় উনি শেষ
বল্লাল সেন, আরেকজন একই নামধারী রাজা) প্রচন্ড ধর্মান্ধ ছিলেন। তার রাজ্যে একজন মুসলীম প্রজা ছিলেন। তার কোন সন্তান হয় না। একদিন
এক ফকির তার বাসায় ভিক্ষা চাইতে এসে বলে, বাবা আমাকে ভিক্ষা দাও। আল্লাহ তোমার মনের আশা পুর্ন করবে। সেই গৃহস্থ প্রচন্ড রাগ করে বলে তোমাকে ভিক্ষা দিবো না। তুমি ভন্ড ফকির। আমার কোন পুত্র সন্তান হয় না।
সেই
ফকির বললেন। আমি দোয়া করলাম তোমার পুত্র সন্তান হবে। কিন্তু সন্তান হলে তুমি অবশ্যই আল্লাহর নামে একটা গরু কোরবানী দিবে।আসলেই তার এক পুত্র সন্তান
হলো। বল্লাল সেনের রাজ্যে গরু খাওয়া বড় অপরাধ। কাছেই
ছিল জঙ্গল। সেই গৃহস্থ লুকিয়ে গরু জবাই দিয়ে হার গোর মাটি চাপা দিল। কিন্তু এক বদমাশ কাক
সেই মাংসের টুকরা উড়িয়ে নিয়ে বল্লাল সেনের প্রাসাদে ফেললো। বল্লাল সেন গেলেন ক্ষেপে (লক্ষ্যনীয় মহাস্থান গড়ের লোক কথার সাথে যথেষ্ট সাদৃশ্য)। সেই মুসলমান
প্রজাকে ধরা হলো। বল্লাল সেন আদেশ করলেন। তুমি ছেলে হওয়াতে গরু কুরবানী করেছ। তুমি জাননা হিন্দুদের কাছে গরু প্রচন্ড শ্রদ্ধার জিনিস। এখন গরুর বদলে তোমার সদ্যজাত পুত্রকে হত্যা করা হবে। পুত্রকে বাচাতে সেই গৃহস্থ পালিয়ে গেলেন। পালাতে পালাতে উনি পবিত্র মক্কা শরীফে গেলেন। মক্কা শরীফে বাবা আদম নামের একজন ধার্মিক পীর সব ঘটনা শুনে
অনেক রাগ করলেন। উনি সাড়ে সাতহাজার মুরীদ নিয়ে বিক্রমপুর আসলেন। এখানে উনারা শব্দ করে আজান দিয়ে নামায পড়া শুরু করলেন। উনি এজন্যে একটা মসজিদ নির্মান করেন। এ অঞ্চলের প্রথম
মসজিদ। এর নাম বাবা
আদমের মসজিদ। বল্লাল সেন তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করলেন।
বল্লাল
সেনের সেনাবাহিনী অনেক বড়। এরপরেও উনি প্রাসাদে বলে রেখেছিলেন যদি আমি মারা যাই তোমরা প্রাসাদের সব মহিলা সুইসাইড
করবে। রানীরা জিজ্ঞেস করলো, কিভাবে আমরা বুঝবো তুমি মারা গেছ? উনি জানালেন তার জামার ভেতরে একটা কবুতর লুকানো থাকবে। মারা গেল সেই কবুতর ছাড়া পেয়ে উড়ে আসবে আর তার পরে
সব মহিলারা গন সুইসাইড করবে।
যুদ্ধে মুসলমানরা হেরে গেল। শেষে বাবা আদম যুদ্ধ ক্ষেত্রেও নামায পড়ছিলেন। কিন্তু বল্লাল সেনের তীরন্দাজরা তার চুল পরিমান ক্ষতি করতে পারলো না। বাবা আদম নামায শেষে বল্লাল সেনের মুখো-মুখি লড়াই হলো। বাবা আদম বললেন। আল্লাহর ইচ্ছে আমি তোমার হাতে মারা যাব। চালাও তলোয়ার। বল্লাল সেন তরবারী চালালেন কিন্তু তা উনাকে
একটুও
আহত করতে পারলো না। বাবা আদম বললেন। আল্লাহ চান না কাফিরের তলোয়ারে
আমার মৃত্যু হোক। তুমি আমার তলোয়ার নাও। বল্লাল সেন এবারে বাবা আদমের তলোয়ার নিয়ে তাকে আঘাত করলেন এবং বাবা আদম শহীদ হন। বাবা আদমের মসজীদের পাশেই তার মাজারে উনার কবর। মসজিদটা দুর্দান্ত সুন্দর। গেলেই পবিত্র অনুভতি হয়। জায়গাটার নাম সিপাহীপাড়া। এখানেই বাবা আদম বল্লাল সেনের সাথে লড়াই করেন। বাবা আদমকে হত্যার পর গায়ে লেগে
থাকা রক্ত ধুতে বল্লাল সেন নদীর পানিতে ঝুকেন। ঝোকার ফলে চান্স পেয়ে উনার কবুতরটা পালিয়ে যায়। বল্লাল সেন বিপদ বুঝতে পেরে দ্রুত প্রাসাদে ফেরেন।ততোক্ষনে দেরী হয়ে গেছে। কবুতর দেখে রানীরা সবাই বিশাল অগ্নিকুন্ড জ্বালিয়ে তাতে আত্মাহুতি দেন। শোকে দুঃখে কাতর বল্লাল সেন নিজেও আত্মহত্যা করেন।
বল্লাল
সেনের মৃত্যুর কারন তার হাতেই নিহত বাবা আদম। লড়াইয়ে পরাজিত হয়েও উনি জয়ী। বল্লাল সেনের মৃত্যুর পরে বৌদ্ধরা আবার সিংহাসনে বসে। কিন্তু বেশী দিনের জন্যে না। মুসলমানরা আসা শুরু করেছে। খুব দ্রুত ক্ষমতা চলে যায় তাদের হাতে। তারা অবশ্য রাজধানী হিসাবে ট্যাকটিক্যাল কারনে বিক্রমপুর নয় গড়ে তোলে
আরেক নগর। গীয়াসউদ্দিন আযম শাহ, ঈসা খা প্রমুখের হাত
ধরে পূর্ণতা পায় নতুন রাজধানী। যার নাম সোনার গাঁ। ধিরে ধিরে বিক্রমপুর রাজধানী থেকে হয় শহর, শহর
থেকে গ্রাম।
মুন্সীগঞ্জে
প্রভাবসালীদের সাথে প্রশাসনের কিছ অসাধু কর্মকর্তাও জড়িত
মুন্সীগঞ্জে
প্রভাব সালীদের দাপটে বে-দখল হয়ে
যাচ্ছে প্রাচিন বিক্রমপুরের রাজা বল্লাল সেনের ঐতিহ্যবাহী রামপাল দিঘী। দিঘীর চার পাড়ে নির্মান হচ্ছে ঘড় বাড়ী। এতে হারিয়ে যেতে শুরু করেছে মুন্সীগঞ্জ তথা প্রাচিন বিক্রমপুরের ইতিহাস ও ঐতিয্য। এর
সাথে প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তারও জরিত থাকার অভিযোগ পাওয়াগেছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখাগেছে, প্রায় ২২ শত ফুট
দৈর্ঘ ও ৮ শত
ফুট প্রস্থ বিশাল আকৃতির দিঘীটি বে-দখলের কারনে
ধিরে ধিরে সংকুচিত হয়ে আসছে। এ বিশাল আকৃতির
দিঘীটির আয়াতন সংকুচিত হয়ে প্রায় অর্ধেক হয়েগেছে। দিঘীর চার পাড়ে নির্মান করা হচ্ছে কাচা-পাকা ঘড় বাড়ী।
স্থানীয়
জনগন অভিযোগ করে যখন যে সরকার মতায়
আসে সেই সরকারের লোকজন ও স্থানিয় ভূমি
অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজেশে শুরু হয় দিঘীর পার দখলের প্রক্রিয়া। পরে ধিরে ধিরে শুরু হয় দিঘীর ভূমি দখলের কাজ। বর্তমানে দিঘীর দনি-পূর্ব পাড় দখল করে মাটি দিয়ে ভরাট করা হচ্ছে। এবং ঠিক তার উল্টো পাড়ে নির্মান করা হচ্ছে বিশাল আকৃতির বহুতল ভবন।
আর
বিগত কিছু দিনের মধ্যে দিঘীর পশ্চিম পারে নির্মান করা হয়েছে আরো একটি দ্বিত্বল ভবন। একাজে কেউ বধা প্রদান করলে তাদের মার ধর করার হুমকি
দেয় ভূমি দস্যুরা এবং জায়গা নিজেদের বলে দাবী করে। ইতিহাস থেকে জানা গেছে মুন্সীগঞ্জ তথা বিক্রমপুরের ঐতিহ্যের মধ্যে বাবা আদম শাহী মসজিদ, ইদ্রাকপুর কেল্লা, বজ্রোযোগীনি তে অতিস দিপংকর
এর বাড়ী, টঙ্গীবাড়ীর কালীবাড়ী, সোনারং এর জোরা মঠ,
আউটশাহীর শাহী মসজিদ, রাজা বল্লাল সেনের রাম পাল দিঘী, কোদাল ধোয়া দিঘী ও রাজা বল্লাল
সেনের বাড়ী অন্যতম। এগুলির প্রত্যেকটিরই আলাদা আলাদা ইতিহাস রয়েছে।
লোক
মুখে রাজা বল্লাল সেনের দিঘীটির ইতিহাস একটু ভিন্ন রকম। বৃদ্বদের মুখ থেকে জানা গেছে, প্রাচিন বিক্রমপুরের রাজধানী রামপাল অঞ্চলে পানির সমস্যা ছিল আর তাই রাজা
বল্লাল সেনের মা এ অঞ্চলের
পানির সমস্যা দুর করার জন্য একটি বড় ধরনের পানির উৎস খনন করার নির্দেশ দিলে রাজা বল্লাল সেন মায়ের নির্দেশ পালনের জন্য বড় দিঘী খননের উদ্দোগ নেন। দিঘীর দৈর্ঘ ও প্রস্থ নির্ধারন
করার জন্য সির্ধান্ত নিলেন তার মা সকাল থেকে
পায়ে হেটে যেখানে গিয়ে কান্ত হয়ে বসবেন সেটা হবে দৈর্ঘ আর তার পর
প্রস্থে যতটুকু যেতে পারবেন সেটা হবে প্রস্থ।
দৈর্ঘ-
প্রস্থ নির্ধারনের পরে কয়েক হাজার শ্রমীক কাজ করে দিঘীটি খনন করেন। এ সময় শ্রমীক
দের কাজ শেষ করে কোদাল ধোয়ার জন্য যে জলাশয় তৈরী
করা হয় তা এখন কোদাল
ধোয়ার দিঘী নামে পরিচিত। রাজা বল্লাল সেনের দিঘী দখল সম্পর্কে দিঘীর পাশে বসবাস কারীরা দাবী করেন দিঘীর জায়গায় নয় তারা নিজেদের ব্যাক্তি মালিকানা জায়গায় ঘড় বাড়ী নির্মান করছেন। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে
রামপাল এলাকার একাধিক ব্যাক্তি জানান, যারা দিঘীর পারে ঘর-বাড়ী নির্মান
করছে তারা দিঘীরপারে জায়গাটি নিজেদের জায়গা বলে দাবী করছে।
তারা
ভূমি অফিসের অসাধূ কর্মকর্তাদের টাকা দিয়ে ও প্রভাব সালীদের
মতার বলে এ জায়গা গুলি
দখল করে নিচ্ছে। এ বিষয়ে মুন্সীগঞ্জ
জেলা প্রশাসক আজিজুল আলম জানান, দিঘীর জায়গা দখল সমম্পর্কে আমার কিছুই জানা নেই। আসলে এসব ঐতিহ্যবাহী জায়গা গুলি প্রশাসনের একার পে রা করা
সম্ভব নয়। এ গুলি রায়
স্থানীয় বাবে জনসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি দিঘীর জায়গা নিজের বলে দাবী করে তাহলে তার কাগজ পত্র দেখা হবে। আর কেউ যদি
সরকারী ভূমি দখল করে তাহলে তাদের কে ছাড় দেওয়া
হবে না। রাজা বল্লাল সেনের দিঘী রার জন্য তিনি খূব দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহনের আস্বাশ দেন। সর্বপরি প্রাচিন বিক্রমপুরের ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে রা
করতে হলে এ সমস্ত ভূমি
দস্যুদেরকে কঠোর হস্থে দমন করতে হবে বলে মনে করে অভিঙ্গ মহল।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
ঢাকার
পার্শ্ববর্তী জেলা মুন্সীগঞ্জ। মুন্সীগঞ্জ সদর উপজেলার রামপাল ইউনিয়েনে রাজা বলস্নাল সেনের দিঘী বা রামপালের দিঘীর
অবস্থান। সড়কপথে ঢাকা থেকে মুন্সীগঞ্জের দূরুত্ব মাত্র ২৩ কিলোমিটার। তবে
এই দিঘীটি দেখার জন্য আরো ০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে
আসতে হবে। ঢাকা হতে সকালে এসে দিঘীটি দর্শন করে বিকেলেই ঢাকায় ফিরে আসা যাবে। সড়কপথে যেতে কষ্ট হবে না। তবে নৌপথে গেলে সময়ও বাচঁবে এবং যানজট এড়িয়ে নদী পথের সৌন্দর্য অবগাহন করে সাচ্ছন্দের সাথে পৌছানো যাবে। সদর ঘাট থেকে মুন্সীগঞ্জগামী লঞ্চে ২ ঘন্টার মধ্যেই
পৌছে যাওয়া যাবে মুন্সীগঞ্জ লঞ্চ ঘাটে। এখান থেকে রিক্সায় রামপাল ইউনিয়নের রামপাল কলেজের পাশে রাজা বলস্নাল সেনের দিঘী বা রামপালের দিঘী
দেখতে যাওয়া যায়। ভাড়া ৩৫-৪০ টাকা।