মাগুরা
শহরের পূর্বাংশে নবগঙ্গা নদীর তীরে সাতদোহা শ্মশান, ন্যাংটা বাবার আশ্রম ও মন্দির নদীর
তীরের গভীর জঙ্গলাকীর্ণ শ্মশান ভূমির প্রান্তবর্তী লতাগুল্মতলে একদিন পরিধেয়বিহীন এক সাধক পুরুষের
আবির্ভাব লক্ষ্য করে স্থানীয় অধিবাসীগণ এবং বিস্মিত ও চমৎকৃত হন।
পরবর্তীতে স্থানীয় অধিবাসীগণ জানতে পারে তিনি গাংনালিয়া শ্মশান থেকে এখানে এসেছেন। ক্রমশঃ এই সাধক পুরুষের
নানা অলৌকিক ক্ষমতা ও আধ্যাত্বিক গুণাবলীর
পরিচয় চর্তুদিকে ব্যাপ্ত ও প্রতারিত হওয়ার
সাথে সাথে ভক্ত সম্প্রদায়ের আগমণ ঘটতে থাকে এখানে। বাকসিদ্ধ মহাপুরুষ হিসেবে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে স্থানীয় জনমনে পরম শ্রদ্ধার আসনে অভিষিক্ত আজীবন অকৃতদার এই সাধক পুরুষের
নাম জীতেন্দ্র নাথ চক্রবর্তী। নড়াইল জেলার ভবানীপুর গ্রামে ১২৯৫ সালে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম- বেনীমাধব চক্রবর্তী, মাতা- পূর্ণ সুন্দরী দেবী। অনেকেই তাঁর জন্মস্থান যশোর জেলার অভয়নগর থানার কথা বলে থাকেন, যা সঠিক নয়।
গৌরবর্ণ শ্মশ্রুগুস্ফবিহীন সোনালী চুলের সুদর্শন এই সাধক পুরুষ
বিনা পরিধেয় জীবন কাটিয়েছেন। যারা তাঁকে কাছ থেকে দেখেছেন তাদের অনেকে জানিয়েছেন তিনি ভাষায় কোন অভিব্যক্তি প্রকাশ করতেন না। তাঁর যা কিছু প্রকাশ
তা আকার ইঙ্গিতে বুঝে নিতো ভক্ত সম্প্রদায়। জানা যায়, ফটিক চন্দ্র দাস নামক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ০.৮৬ একর
জমি ন্যাংটা বাবার আশ্রমের জন্য দান করেন। সনাতন ধর্মীয় বিভিন্ন পার্বন উপলক্ষ্যে এখানে অগণিত ভক্তের নৃত্য সমাগম হয়। তারা পঞ্চবটি তরুমুল হতে ধূলিকনা সংগ্রহ করে পরম শ্রদ্ধাভরে আস্বাদন করেন বা মস্তকোপরি ধারণ
করেন রোগ মুক্তি বা মনোবাসনা পুরণের
আশায়। ন্যাংটা বাবার স্মৃতিধন্য সাতদোহা শ্মশান আশ্রমে নিত্য পূর্জাচনা অনুষ্ঠিত হয়। মধ্যাহ্নে অন্নভোগ আর সন্ধ্যারাত্রে ফলাহার
নিত্য আয়োজন হয়। পঞ্চবটীর স্নিন্ধ শ্যামল ছায়ায় ঢাকা নবগঙ্গা নদীর তীরের এই আশ্রমের সৌম্যশান্ত
নির্জনতা আর স্নিগ্ধতা মানব
চিত্তকে ক্ষনিকের জন্য হলেও প্রাত্যহিকতার টানাপোড়েন আর মোহবন্ধন থেকে
মুক্তি দিতে পারে। এই মহান সাধক
পুরুষ বাংলা ১৩৭০ সালের ৩০ শে বৈশাখ
মঙ্গলবার আসনে উপবিষ্ট অবস্থায় অগণিত ভক্তকুলকে অশ্রু সাগরে ভাসিয়ে দেহ ত্যাগ করেন। এখানেই তাকে সমাহিত করা হয়।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
মাগুরা
জেলা শহর হতে প্রায় ০১ কিলোমিটার পূর্বদিকে
নবগঙ্গা নদীর দক্ষিণ তীরে অবস্থিত। রিক্সা ও ভ্যানযোগ যাতায়াত
করা যায়।