লিচু চাষ
পুষ্টি
মূল্য: ভিটামিন বি, ভিটামিন সি সমৃদ্ধ।
ভেষজ
গুণ: বোলতা, বিছে কামড়ালে এর পাতার রস ব্যবহার করা যায়। কাঁশি,
পেটব্যাথা, টিউমার এবং গ্ল্যান্ডের বৃদ্ধি দমনে লিচু ফল কার্যকর।
উপযুক্ত
জমি ও মাটি: নিকাশযুক্ত উর্বর বেলে দোআঁশ মাটি লিচু চাষের জন্য উত্তম। তবে
উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে লিচুর চাষ ভাল হয়।
জাত
পরিচিতি: অনেক জাতের লিচুর মধ্যে বেদানা, গুটি, মাদ্রাজি, বোম্বাই, মঙ্গলবাড়ী, মোজাফফরপুরী, চায়না-৩, কদমী সবচেয়ে ভাল। বাংলাদেশ
কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) ৩টি লিচুর জাত উদ্ভাবিত করেছে বারি লিচু-১, বারি লিচু-২ ও বারি লিচু-৩।
বারি
লিচু-১: ফল ডিম্বাকার এবং রঙ লাল। দেশের
উত্তারাঞ্চলে এ জাতটি চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী। এ
জাতটি আগাম জাত।
বারি
লিচু-২: বীজ অপেক্ষাকৃত বড়। প্রতি
বছর নিয়মিত ফল দেয়। জাতটি
বাংলাদেশের সর্বত্রই চাষ করা যায়।
বারি
লিচু-৩: মাঝ মৌসুমী জাত, নিয়মিত ফল ধরে। গোলাপের
সুঘ্রান বিশিষ্ট অপেক্ষাকৃত বড় আকারের ফল উৎপাদনকারী এ জাতটি বসতবাড়ীর বাগানের জন্য অত্যন- উপযোগী। ফলের
শাঁস মাংসল রসালো ও মিষ্টি।
চারা
তৈরি: কাটিং ও গুটি কলমের মাধ্যমে চারা তৈরি করা হয়।
চারা
রোপণ: জ্যৈষ্ঠ-আষাঢ় মাস কলমের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। ৮-১০ মিটার দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হয়। চারা
রোপণের সময় গর্তে কিছুটা পুরাতন লিচু বাগানের মাটি মিশিয়ে দিলে চারার অভিযোজন দ্রুত হবে।
সার
ব্যবস্থাপনা: প্রতি গর্তে টিএসপি সার ৭০০ গ্রাম, এমওপি সার ৪৫০ গ্রাম, জিপসাম সার ৩০০ গ্রাম, জিংক সালফেট ৬০ গ্রাম ও জৈবসার ২৫ কেজি দিতে হয। গর্ত
ভর্তির ১০-১৫ দিন পর মাটির বলসহ গর্তের মাঝখানে সোজাবাবে লাগাতে হবে। রোপণের
৩ মাস পর ৩০০-৩৫০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা দরকার।
পূর্ণ
বয়স্ক ফলন- গাছের জন্য ইউরিয়া সার ২ কেজি, টিএসপি সার ৩.৫ কেজি, এমওপি সার ২ কেজি, জিপসাম সার ২৬০ গ্রাম, জিংক সালফেট সার ৬০ গ্রাম, গোবর ১৫ কেজি এবং ৯ কেজি ছাই প্রয়োগ করতে হয়।
অন্তবর্তীকালীন
পরিচর্যা: পূর্ণ বয়স্ক গাছে পর্যাপ্ত আলো বাতাস প্রবেশের জন্য অপ্রয়োজনীয় ডালপালা কেটে ফেলতে হবে। কলমের
গাছের বয়স ৪ বছর পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত মুকুল ভেঙ্গে দেয়া দরকার।
সেচ
ও আগাছা ব্যবস্থাপনা: চারা গাছের বৃদ্ধির জন্য ঘন ঘন সেচ দিতে হবে। তাছাড়া
গাছের গোড়া আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
পোকা
মাকড় ব্যবস্থাপনা
পোকার
নাম: লিচুর ফল ছিদ্রকারী পোকা
ভূমিকা:
এটি লিচুর একটি ক্ষতিকারক পোকা। এর
আক্রমণে লিচুর বাজার মূল্য কমে যায়।
ক্ষতির
নমুনা: ফল পরিপক্ক হওয়ার সময় এ পোকা ফলের বোঁটার নিকট দিয়ে ভিতরে ঢুকে বীজ খেতে থাকে। এরা
ফলের শাঁস খায় না তবে বোঁটার কাছে বাদামী রংয়ের এক প্রকার করাতের গুড়ার মত পদার্থ উৎপন্ন করে।
ব্যবস্থাপনা:
এ পোকা দমনের জন্য ফল ধরার পর লিবাসিড ৫০ তরল বা ফেনিট্রোথিয়ন ৫০ তরল অথবা টোসিটকস আর ২৫ তরল এর যেকোন একটি প্রতি লিটার পানিতে ১ মি.লি হারে মিশিয়ে ১৫ দিন পর পর ২ থেকে ৩ বার সেপ্র করতে হবে। তবে
মনে রাখতে হবে ফল সংগ্রহের অন্তত: ১৫ দিন পূর্বে শেষ সেপ্র করতে হবে।
মাকরের
নাম: লিচুর পাতার ক্ষুদ্র মাকড়
ভূমিকা:
লিচু গাছের পাতা, ফুল ও ফলে এর আক্রমণ দেখা যায়।
ক্ষতির
নমুনা: আক্রান্ত পাতা কুঁকড়িয়ে যায় এবং পাতার নীচের দিক লাল মখমলের মত হয়। পরবর্তীতে
পাতা দুর্বল হয়ে মরে যায় এবং ডালে ফুল, ফল বা নতুন পাতা হয় না। আক্রান্ত
ফুলে ফল হয় না।
ব্যবস্থাপনা:
আক্রান্ত পাতা সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলা। ইথিয়ন
৪৬.৫ তরল বা নিউরণ ৫০০ তরল ২ মি.লি হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত গাছে ভালভাবে সেপ্র করা।
ফসল
তোলা: ফলের খোসার
কাঁটা চ্যাপ্টা হয়ে যখন মসৃণ হয় এবং ফলের গায়ে লালচে বর্ণ ধারণ করে তখন কিছু পাতাসহ ডাল ভেঙ্গে রিচু থোকায় থোকায় সংগ্রহ করতে হবে।