থাইরয়েড সমস্যা ও প্রতিকার

থাইরয়েড সমস্যা প্রতিকার

থাইরয়েড সমস্যা ও প্রতিকার



শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি গ্রন্থি থাইরয়েড এটি একটি এনড্রোক্রাইন গ্ল্যান্ড মানুষের গলার সামনে এই গ্রন্থি অবস্থিত এই গ্ল্যান্ড থেকে থাইরয়েড হরোমন তৈরি হয় যে হরমোন শরীরের সব রেচন প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে

থাইরয়েড হরমোন উৎপাদনের ক্ষেত্রে, প্রথমে ব্রেনের হাইপোথালামাস থেকে TR H নামে একটি হরমোন তৈরি হয় TR H তারপর পিটুইটারি নামের অন্য একটি গ্রন্থি কে উদ্দিপীত করলে পিটুইটারি গ্ল্যান্ড থেকে TR H নামে একটি হরমোন তৈরি হয় এই হরমোন আবার থাইরয়েড গ্রন্থিকে উদ্দীপিত করলে, খাবার থেকে প্রাপ্ত আয়োডিনকে ব্যবহার করে থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয়

থাইরয়েড হরমোন দুই প্রকার-T3 (.%) এবং T4(৯৯.%), এই হরমোন দুটি আমাদের শরীরের অনেক গুরত্বপূর্ণ কার্যাবলী সম্পাদনে ভূমিকা রাখে এছাড়া ইলেট্রোলাইট পরিবহণ, পেশী কার্ডিয়াক কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা, হাড়ের পুনর্গঠন, শিশু বয়সের বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ, মহিলাদের মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণে সাহায্য কর, কোষীয় প্রোটিনের সংশ্লেষণ, শরীরের খাবার গ্রহণ করার তা শক্তিতে রুপান্তর করার ক্ষমতাকে নিশ্চিত করা, বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা, বিটা ক্যারোটিনকে রুপান্তরিত করে ভিটামিন তৈরি করা, মানসিক অবস্থা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করাও এই গ্রন্থির কাজ

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে শারীরিক মানসিক বিকাশে বিশেষ ভূমিকা রাখে থাইরয়েড গ্রন্থির উপর নির্ভর করে শারীরিক এবং মানসিক বিকাশ ঘটে থাকে
থাইরয়েড সমস্যাঃ থাইরয়েড সমস্যা মূলত দুই রকমের যেমন, যদি শরীরে থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমে যায় তবে তাকে বলেহাইপোথাইরয়েডিসমআর যদি বেড়ে যায় তাকে বলে হাইপারহাইরয়েডিসম বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে রোগের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি ছেলেদের থেকে মেয়েদের এই সমস্যা বেশি হয় কারণ, মহিলাদের রক্তে সময় অ্যান্টি থাইরয়েড অ্যান্টিবডি বেড়ে যায় যা থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ কমিয়ে দেয় বিভিন্ন অটোইমিউন ডিজিজ যেমন রিউমাটয়েড আর্থাইটিস, হাসিমোটোস ডিজিজ, লুপাস ডায়াবেটিস এগুলো জেনেটিক কারণে মহিলাদের বেশি হয় ইস্ট্রোজেন-প্রোজেস্টেরন স্ত্রী হরমোন থাইরয়েড রোগে ভূমিকা রাখে থাইরয়েড অসুখ মহিলাদের বেশি হয় ২০ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে, পুরুষের তুলনায় যা প্রায় - গুণ

হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণ থাইরয়েড গ্লান্ড ছাড়া অন্য কোনো উৎসের কারণে থাইরয়েড হরমোনের আধিক্য ছাড়া গ্রেভস ডিজিজ (এক ধরনের অটোইমিউন প্রসেস), মাল্টিনডিউলার গয়টার, থাইরয়েড ক্যান্সার ইত্যাদির কারণে হাইপারথাইরোয়েডিজম দেখা যায়

এর লক্ষণ গুলো হলঃ অতিরিক্ত ঘাম হওয়া, গরম সহ্য করতে না পারা, হাত পা হালকা কাপা, নার্ভাসনেস, মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, হঠাৎ করে ওজন কমে যাওয়া, অনেক খেয়েও ওজন বাড়াতে না পারা, অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, কাজে মনোযোগের অভাব, মহিলাদের অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ঋতস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া, ঘুম কম হওয়া, কোটর থেকে বের হয়ে আসা বড় বড় চোখ

চিকিৎসাবিহীন অবস্থায় যদি অনেকদিন হাইপারথাইরয়েডিসম থাকে, তাহলেথাইরয়েড স্ট্রমহতে পারে তবে এটি খুব কমন কোনো ঘটনা নয় এবং সাধারণত বৃদ্ধ বয়সে হয়থাইরয়েড স্ট্রমবলতে বুঝায় হঠাৎ করে অতিরিক্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরি হয়ে যাওয়া এর ফলে প্রচণ্ড জ্বর, মাথা কাজ না করা, পেটে ব্যথা, উচ্চরক্তচাপ, হার্ট বিট অত্যন্ত বেড়ে যাওয়া এবং হার্ট ফেইলিওর হয় তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না করলেথাইরয়েড স্ট্রমজীবনঘাতী হতে পারে সাধারণত ইনফেকশন স্ট্রেস হাইপারথাইরয়েডিসমের রোগীর মধ্যেথাইরয়েড স্ট্রমতৈরি করে
হাইপোথাইরয়েডিসম এর কারণ হাইপারথাইরয়েডিসম এর বিপরীত থাইরয়েড হরমোনের সল্পতার কারণে এই সমস্যা দেখা দেয়
হাইপোথাইরয়েডিসম এর লক্ষণ গুলো হলঃ দুর্বলতা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া, ঠাণ্ডা সহ্য করতে না পারা, কোষ্ঠ্যকাঠিন্য, বিবর্ণ শুষ্ক ত্বক, পেশি এবং জয়েন্টগুলো তে জড়তা বা ব্যথা অনুভব করা, মহিলাদের বেশি পরিমাণে অথবা বেশি সময় ধরে ঋতুস্রাব, ডিপ্রেশন, চিকন এবং ফাটা চুল অথবা ফাটা নখ, চলাফেরায় মন্থর গতি, হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়া, খুব কম খেয়েও ওজন কমাতে না পারা, চুল পড়া, বাড়ন্ত ছেলেমেয়েদের ধীর উচ্চতা বৃদ্ধি এবং ধীর সেক্সুয়াল ডেভেলপমেন্ট এবং স্নায়ু মাংসপেশীর নানাবিধ সমস্যা

হাইপোথাইরয়েডিজম হলে শিশুদের বেলায় অবর্ধনজনিত রোগ বা ক্রিটিনিজম হবে এবং উঠতি বয়স্কদের বা প্রাপ্তবয়স্কদের মিক্সিডিমা হয় ক্রিটিনিজমের লক্ষণগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মাংসপেশি হাড় এবং স্নায়ুতন্ত্রের সঠিক বর্ধন না হওয়া এর ফলে শিশু বেঁটে হয়, বোকা বা বুদ্ধিহীন হয়ে থাকে জিহ্বা বড় হবে মুখ থেকে বেরিয়ে আসে এবং নাভির হার্নিয়া হয় হাইপোথাইরয়েডিজম হওয়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে অটোইমিউন ধ্বংসপ্রাপ্ত, ওষুধ, টিএসএইচ স্বল্পতা, গর্ভাবস্থায় মায়ের থাইরয়েড হরমোন স্বল্পতা ইত্যাদি

চিকিৎসাঃ রোগের চিকিৎসার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল রোগ নির্নয় রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে আপনার রক্তে TSH, T3 এবং T4 এর পরিমাণ নির্ণয় করলেই বোঝা যাবে যে আপনার থাইরয়েড এর সমস্যা আছে কিনা যদিও থাইরয়েড এর সমস্যা যাতে না হয়, তা আগে থেকে প্রতিরোধের উপায় নেই (যদি না আয়োডিন এর অভাবে থাইরয়েড এর রোগ হয়ে থাকে), কিন্তু যদি রোগ হয়ে যায়, তাহলে দীর্ঘমেয়াদি হলেও তার চিকিৎসা আছে

হাইপারথাইরয়েডিজমের উন্নত চিকিৎসা হচ্ছে অ্যান্টিথাইরয়েড ওষুধ যেটি থাইরয়েড গ্রন্থির কার্যকারিতাকে কমিয়ে দেবে ওষুধের পাশাপাশি সার্জারি করা যেতে পারে যেহেতু গ্রন্থিটি বেশি কাজ করছে, তাই কিছু অংশ কেটে কার্যকারিতা কমিয়ে দেওয়া হয় যেখানে রেডিও আয়োডিন থেরাপি ব্যবহার করা হয় অ্যান্টি থাইরয়েড ওষুধ বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেড় থেকে দুই বছর ব্যবহার করা হয় তার পর এই ওষুধ তাকে বন্ধ করে দিতে হয় এই পদ্ধতি শুধুমাত্র একবার প্রয়োগ করা যায় হাইপোথারিয়েডিজম এর ক্ষেত্রে অর্থাৎ যাদের থাইরয়েড গ্ল্যান্ড থেকে কম পরিমাণ থাইরয়েড হরমোন থাইরক্সিন নিঃসৃত হয়, এই ঘাটতি পূরণ করার জন্য ডাক্তাররা তাদের থাইরক্সিন ট্যাবলেট খাবার পরামর্শ দেন প্রয়োজন অনুযায়ী রোগীকে ১০০ থেকে ২০০ মাইক্রোগ্রাম থাইরক্সিন দেওয়া হয় / মাস ওষুধ সেবনে মাঝারি মাত্রার অসুখ নিরাময় হয় এমনকি অনেকে ওষুধ ছাড়াও সুস্থ হয়ে যান কিন্তু একেবারেই যাদের থাইরক্সিন নিঃসরণ হয় না বা কোনো কারণে থাইরয়েড গ্ল্যান্ডটাকেই কেটে বাদ দিতে হয়েছে তাদের সারাজীবন ওষুধ না খেয়ে উপায় নেই

Post a Comment

Previous Post Next Post