কিডনিতে পাথরের কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা


 কিডনিতে পাথরের কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা

কিডনিতে পাথরের কারণ লক্ষণ ও চিকিৎসা

বর্তমান সময়ে অনেক প্রচলিত রোগের একটি হল কিডনিতে পাথর পেছন কোমরে ব্যথা, বারবার প্রস্রাবে সংক্রমণ নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে গিয়ে কিডনিতে পাথর ধরা পড়লো এরপর তা অনেককেই বিচলিত করে চিকিৎসা না করলে ধীরে ধীরে কিডনির কার্যক্ষমতা কমতে থাকে এবং একসময় একেবারেই অকার্যকর হয়ে যেতে পারে কার্যক্ষমতা কমতে থাকা নির্ভর করে পাথরের ধরন, অবস্থান, আকৃতি এবং সঠিক চিকিৎসা পরবর্তী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর তাই সঠিক সময়ে সঠিক ব্যবস্থা নিলে কার্যক্ষমতা অনেকাংশে রোধ করা যায়

কিডনিতে পাথর হওয়ার কারণ : কিডনির যেসব রোগ বের করা গেছে  তার মধ্যে পাথর একটি পুরনো রোগ পাথরগুলো কেবল কিডনিতে নয়, এর বিভিন্ন অংশে হতে পারে- কিডনিতে হতে পারে, কিডনির ভেতর থেকে বের হওয়া বৃক্ক নালীতে হতে পারে, প্রগ্রাবের থলেতে হতে পারে এবং থলে থেকে বের হয়ে অনেক সময় পাথর মূত্রনালিতে আটকা পড়ে পাথর কেন হয়- এর উত্তর দেওয়া মুশকিল কেননা বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে দেখেছেন অনেক ক্ষেত্রে কারণ জানাই যায় না তবে কিছু কারণ ধারণা করা যায় যেমন-
কিডনিতে বারবার সংক্রমণ এবং যথোপযুক্ত চিকিৎসা না করা
দৈনিক অল্প পানি পান
খাবারে অধিক লবণ
কম ফলফলাদি শাকসবজি খাওয়া
বেশি লাল মাংস যেমন-গরু খাসির মাংস এবং পোলট্রির মাংস খাওয়া কিডনিতে পাথর হওয়ার অন্যতম কারণ
বেশি বা খুব কম ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া
যারা ক্যালসিয়াম জাতীয় ট্যাবলেট প্রচুর পরিমাণে খায় এদেরও পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি
যেসব লোকের ইনফ্লামেটরি বাওয়েল রোগ থাকে, তারা কিডনির রোগ হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন
টপিরামেট জাতীয় (এটা টোপাম্যাক্স হিসেবে পাওয়া যায়) ওষুধ কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়ায় এগুলো সাধারণত মাইগ্রেনের রোগে ব্যবহার করা হয়
অতিরিক্ত অক্সালেট জাতীয় শাকসবজি যেমন, পুঁই শাক, পালং শাক, বিট ইত্যাদি বেশি পরিমাণে খেলে কিডনিতে পাথর হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তবে পরিমিত পরিমাণে খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চরক্তচাপ অথবা বাতের ব্যথা কিংবা মূত্রাশয়ে প্রদাহের উপযুক্ত চিকিৎসা না করলে কিডনিতে পাথর হতে পারে
কিডনিতে পাথর হওয়ার লক্ষণসমূহ :  অধিকাংশ ক্ষেত্রে কোনো উপসর্গ না- থাকতে পারে তবে- মাঝে মাঝে প্রগ্রাবের সঙ্গে ছোট ছোট পাথর যাওয়া হঠাৎ তলপেটে, নিচের পেটের দুই পাশে বা কোমরে তীব্র ব্যথা রক্তবর্ণের লাল প্রস্রাব, ব্যথা, জ্বালাপোড়া থাকতে পারে ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব বা বমিও হতে পারে ঘোলাটে এবং দূর্গন্ধযুক্ত প্রগ্রাব
ঘন ঘন  প্রস্রাব হওয়া বা অল্প একটু হয়েই আর না হওয়া কাঁপুনি দিয়ে জ্বর
তবে আকস্মিকভাবে পেট বা পিঠে ব্যথা অনুভব করা কিংবা প্রস্রাবের সময় ব্যথা অনুভব করা মানেই কিডনিতে পাথরের লক্ষণ নয়, এসব ক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়েজন, কারণ হতে পারে এটি মারাতœ কোন রোগের লক্ষণ এসব উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে নিন আসলেই কিডনিতে পাথরের জন্য এমন হচ্ছে কিনা
চিকিৎসা : কিডনিতে পাথর হলেই অপারেশন করতে হয় এমন ধারণা ঠিক নয় চিকিৎসা নির্ভর করে পাথরের অবস্থান, আকার, ধরন, কিডনির কার্যকারিতা এবং প্রস্রাবের পথে প্রতিবন্ধকতার ওপর ছোট অবস্থায় ধরা পড়লে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ব্যথানাশক ওষুধ সেবন এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করার মাধ্যমে এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব, কারণ ছোট আকৃতির পাথর  সাধারণত প্রস্রাবের সাথে বের হয়ে যায় কিছু ক্ষেত্রে পাথর অপসারণের জন্য অস্ত্রোপচার বা যন্ত্রের মাধ্যমে পাথর ভেঙে বের করা হয় কিছু ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার না করে ওষুধ সেবন করার মাধ্যমে পাথর বের করা বা পাথর আর বড় না হওয়ার ব্যবস্থা করা যেতে পারে অস্ত্রোপচারের পরও আবার পাথর হতে পারে সে ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদী ওষুধ সেবন করলে সুফল পাওয়া যেতে পারে
মনে রাখা প্রয়েজন, দৈনিক -১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করলে শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ উপযুক্ত পরিমাণে প্রগ্রাবের সাথে বের হয়ে যায় এবং কিডনির পাথরের ঝুঁকি এবং জটিলতা কমিয়ে আনে
হতে হবে সচেতন : প্রতিদিন অন্তত -১০ গ্লাস পানি পান করুন আমিষ জাতীয় খাদ্যের পরিমাণ পরিমিত রাখুন কখনোই প্রস্রাব আটকে রাখবেন না ক্যালসিয়ামযুক্ত খাবার খাওয়া যাবে কিন্তু প্রয়োজন ব্যতীত ক্যালসিয়াম ওষুধ ভিটামিন ডি যুক্ত ওষুধ না খাওয়াই ভালো বারবার ইউরিন ইনফেকশন দেখা দিলে এর ঠিকমতো চিকিৎসা করান দুধ দুধের তৈরি খাবার পুষ্টিকর হলেও সেসব খাবেন পরিমিত পরিমাণ, অত্যধিক বেশি নয়
ক্যাফেইন এবং সোডা এড়িয়ে চলুন অতিরিক্ত কফি পানে কিডনির অবস্থা আরো খারাপ হবে কিডনিতে পাথর হওয়ার সঙ্গে সরাসরি জড়িত না হলেও অ্যালকোহল কিডনিতে পাথর হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে এছাড়া অ্যালকোহল কিডনির কর্মক্ষমতা নষ্ট করে

Post a Comment

Previous Post Next Post