অ্যালোভেরা বা ঘৃতকুমারীর বিভিন্ন উপকারিতা
‘অ্যালোভেরা’কে প্রাচীন মিশরীয়রা ‘True miracle plant’ অর্থাৎ সত্যিকারের অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন গাছ বলে আখ্যায়িত করেছিলেন। অ্যালোভেরা পাতার জেলকে তারা তাদের সৌন্দর্য বৃদ্ধি, স্বাস্থ্য এবং মঙ্গল বৃদ্ধির প্রতীক হিসেবে মানতো। স্বয়ং ক্লিওপেট্রা এবং নেফারতিতি তাদের নিত্যদিনের ত্বকের যত্ন ও সৌন্দর্য চর্চায় অ্যালোভেরা ব্যবহার করতেন। শুধু সৌন্দর্য চর্চায় নয়, মিশরীয়রা তাদের মৃতদেহ সংরক্ষণেও অ্যালোভেরা জেল ব্যবহার করতো বলে জানা যায়। ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাস প্রতিরোধকারী উপাদান অ্যালোভেরাতে উপস্থিত থাকায় মৃতদেহে সহজে পচন সৃষ্টি হতো না বিধায় তারা বিশ্বাস করতেন, অ্যালোভেরা মৃতদের অমরত্ব দান করতো। আর ঠিক এই কারণেই মিশরীয়রা অ্যালোভেরাকে ‘The plant of immortality’ বলেও আখ্যায়িত করেছিলেন।শুধু মিশরীয়রা নয়, চীনেও অ্যালোভেরা বিশেষ স্থান দখল করে রয়েছে সেই সুপ্রাচীন কাল থেকেই। সেই মার্কো পোলোর সময়েই চীনের চিকিৎসা বিজ্ঞানের এক বিরাট অংশ জুড়ে ছিল অ্যালোভেরা। ‘দ্য স্যালভেশন বুক অফ সিন-শি’-তে অ্যালোভেরাকে আশ্চর্য নিরাময়কারী উদ্ভিদ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া জাপানে এই উদ্ভিদকে ‘Royal plant’ অর্থাৎ রাজকীয় উদ্ভিদ বলে গণ্য করা হয়। সর্বোত্তম স্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য এই উদ্ভিদের রস ব্যবহার করা হতো, এমনকি সামুরাইরা তাদের ত্বকে অ্যালোভেরা জেল দিয়ে ম্যাসাজ করতো।
অ্যালোভেরাতে উপস্থিত পুষ্টি উপাদান
: অ্যালোভেরাকে আমরা ঘৃতকুমারী নামেও চিনে থাকি। এই উদ্ভিদটিতে আমাদের সুস্বাস্থ্য ও সৌন্দর্য রক্ষার অনেক উপাদান ভরপুর রয়েছে। এটি একটি কাণ্ডবিহীন রসালো এবং শাসযুক্ত গাছ। এই গাছটি গড়ে ৬০-১০০ সে.মি লম্বা হয়। পাতা ১০-২০ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। পাতার দু’পাশে কাঁটা থাকে এবং পাতা দেখতে অনেকটা চ্যাপ্টা আকৃতির। অ্যালোভেরার পাতার মধ্য যে স্বচ্ছ জেলির মতো বস্তু পাওয়া যায় তাকে আমরা জেল বলে জানি। পাতার ঠিক নিচেই থাকে হলুদ রং এর ল্যাটিস এবং তার নিচেই এই জেল পাওয়া যায়। অ্যালোভেরাতে রয়েছে অনেক ভিটামিন উপাদান,
যেমন-
এ,
সি,
ই,
ফলিক অ্যাসিড,
বি-১,
বি-২,
বি-৩ এবং বি-৬। এছাড়াও এই উদ্ভিদে রয়েছে ভিটামিন বি-১২ যা কিনা খুব অল্প উদ্ভিতেই পাওয়া যায়। অ্যালোভেরাতে প্রায় ২০ ধরনের মিনারেলস রয়েছে,
তার মধ্যে ক্যালসিয়াম,
ম্যাগনেসিয়াম,
জিঙ্ক,
সেলেনিউম,
ক্রোমিয়াম,
সোডিয়াম,
আয়রন,
পটাশিয়াম,
কপার ও ম্যাংগানিজ অন্যতম।...
হার্টের ক্ষমতা বাড়ে
বেশ কিছু স্টাডিতে দেখা গেছে,
অ্যালোভেরা জুস খাওয়া মাত্র সারা শরীরে অক্সিজেন সমৃদ্ধ রক্তের প্রভাব বেড়ে যায়,
যে কারণে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের পাশাপাশি হার্টের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতেও সময় লাগে না। সেই সঙ্গে রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রাও হ্রাস পায়। ফলে কোনও ধরনের হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে,
তেমনি হঠাৎ করে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও দূর হয়।
ক্ষতের চিকিৎসায় কাজে আসে
রোজের ডায়েটে এই প্রকৃতিক উপাদানটিকে জায়গা করে দিলে দেখবেন কখনও শরীরে কোনও চোট-আঘাত লাগলে সেই ক্ষত সারতে সময় লাগবে না। কারণ অ্যালোভেরা জুসে উপস্থিত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র এমন খেল দেখায় যে,
যে কোনও ধরনের ক্ষত সারতে সময় লাগে না। প্রসঙ্গত,
ক্ষতের উপরে অ্যালোভেরা জেল লাগালেও কিন্তু সমান উপকার পাওয়া যায়।
নানাবিধ হরমোনের ক্ষরণ ঠিক মতো হয়
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে,
নিয়মিত অ্যালোভেরা জেল খাওয়া শুরু করলে দেহের ভেতরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে,
যার প্রভাবে প্রয়োজনীয় হরমোনের ক্ষরণ ঠিক মতো হতে শুরু করে। ফলে হরমেনাল ইমব্যালেন্স হওয়ার মতো সমস্যা ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। প্রসঙ্গত,
প্যানক্রিয়াস সংক্রান্ত নানা রোগের চিকিৎসাতেও এই প্রকৃতিক উপাদানটি বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
পুষ্টির ঘাটতি দূর হয়
বেশ কিছু কেস স্টাডিতে দেখা গেছে,
নিয়মিত এই প্রকৃতিক উপদানটি খাওয়া শুরু করলে শরীরের প্রয়োজনীয় ভিটামিন এবং মিনারেলের ঘাটতি দূর হয়। সেই সঙ্গে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের ঘাটতিও দূর হতে থাকে। প্রসঙ্গত,
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হল সেই উপাদান,
যা আমাদের শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত,
অ্যালোভেরা জেলকে যদি তুলসি,
করলা অথবা আমলকির রসের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন,
তাহলে আরও বেশি উপকার মেলে। সে ক্ষেত্রে ভিতর এবং বাইরে থেকে শরীরের ক্ষমতা তো বাড়েই,
সেই সঙ্গে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না।
শরীর থেকে টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এই রসটা যদি খেতে পারেন,
তাহলে শরীরে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টর পরিমাণ এত বৃদ্ধি পায় যে দেহের প্রতিটি কোণায় জমতে থাকা টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। প্রসঙ্গত,
এই সব টক্সিক উপাদানদের মাত্রা যদি বৃদ্ধি পেতে থাকে,
তাহলে শরীরের প্রতিটি অঙ্গের কর্মক্ষমতা ধীরে ধীরে কমতে শুরু করে। ফলে নানাবিধ রোগ ঘারে চেপে বসতে সময়ই নেয় না। তাই বিষয়ে সাবধান থাকাটা জরুরি!
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
সুস্থভাবে দীর্ঘদিন যদি বাঁচতে চান তাহলে অ্যালোভেরা রস খেতে ভুলবেন না যেন!
কারণ নিয়মিত এই প্রকৃতিক উপাদানটি গ্রহণ করলে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এতটা শক্তিশালী হয়ে ওঠে যে সর্দি-কাশি থেকে শুরু করে ছোট-বড় কোনও রোগই ধারে কাছে ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও কমে।
হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে
শীত মানেই পিকনিক,
সেই সঙ্গে এদিক-সেদিকের খাবার খাওয়া তো রোজের নিয়ম হয়ে দাঁড়ায়েছে। আর এমনটা করতে গিয়ে কি পেটের হাল বেজায় বেহাল হয়ে পরেছে?
তাহলে তো আজ থেকেই অ্যালোভেরা জুস খাওয়া শুরু করতে হবে। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করার পর পাচক রসের ক্ষরণ এতটা বাড়িয়ে দেয় যে বদ-হজমের মতো রোগ ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না। সেই সঙ্গে গ্যাস-অম্বল,
অ্যাসিডিটি এবং কনস্টিপেশনের মতো সমস্যাও কমতে শুরু করে। এবার বুঝেছেন তো খাদ্যরসিকদের জন্য অ্যালোভেরা রস খাওয়ার প্রয়োজন
লোহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বেড়ে যায়
অনেক নারীই অ্যানিমিয়ায় ভুগছেন। এমন পরিস্থিতিতে অ্যালোভেরা প্লান্টের রস খাওয়ার প্রয়োজন যে বেড়েছে,
সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই। কারণ এই প্রকৃতিক উপাদানটিতে উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান দেহের ভেতরে প্রবেশ করার পর এমন খেল দেখায় যে লহিত রক্ত কণিকার উৎপাদন বাড়তে শুরু করে। ফলে অ্যানিমিয়ার প্রকোপ কমতে সময়ই লাগে না।
Tags:
Beauty & Fitness