মূল্য
সংযোজন কর ও সম্পূরক
শুল্ক আইন, ২০১২ কতগুলো মূল নীতির উপর ভিত্তি করে প্রণয়ন করা হয়েছে। মুসক কর্তৃপক্ষকে কর নির্ধারনের জন্য
এসব নিয়ম বা নীতিসমূহ মাথায়
রেখে এগুতে হয়। যে সমস্ত নিয়মের
উপর ভিত্তি করে কর্তৃপক্ষ কর নির্ধারণ করে
থাকেন সেগুলোই কর এর নীত
হিসাবে বিবেচিত হয়ে থাকে। নতুন মুসক ব্যবস্থায় যে নীতি বা
নিয়মের অনুসরণ করা হয়েছে। এ গুলো নিম্নরূপঃ
(১) নিরপেক্ষতার নীতি:
মূল্য
সংযোজন কর ও সম্পূরক
শুল্ক আইন, ২০১২ বা নতুন মুসক
আইনের অন্যতম নীতি হলো নিরপেক্ষতা। সকল ব্যবসায়ীর জন্য সমান সুযোগ রাখা হয়েছে। একই সেক্টরের মধ্যে যেন ব্যবসায়ের সুযোগ সবাই সমানভাবে পায় তার জন্য Level playing field তৈরি নতুন আইনের প্রধান লক্ষ্য। এটাই হলো মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক
শুল্ক আইন, ২০১২ এর নিরপেক্ষতার নীতি।
সকল
কাজকর্ম অনলাইন নির্ভর হওয়ায় কাউকে আর মুসক অফিসে
যেতে হবে না। সব কাজ কর্মই
ব্যবসার কর্মস্থলে বসেই সম্পন্ন করা যাবে। এর ফলে মুসক
প্রশাসন ও ব্যবসায়ী কেউ
কাউকে চিনবে না। এর ফলে পারস্পরিক
যোগাযোগ ও সুযোগ সুবিধা
প্রদানের কোন সুযোগ থাকবে না। কেউ কাউকে না চেনার কারণে
সবাই নিরপেক্ষতার ও নিয়ম মেনে
তাদের দায়িত্ব পালন করবে।
(২) দক্ষতার নীতি :
মূল্য
সংযোজন কর ও সম্পূরক
শুল্ক আইন, ২০১২ এর কাজকর্ম সব
অনলাইন ভিত্তিক হওয়ায় কার্যসম্পাদনের দক্ষতা ও গতি বৃদ্ধি
পাবে। কর-জিডিপি অনুপাত
বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ মূসকের উৎপাদনশীলতা অনেক কম বিধায় তা
বৃদ্ধিও নীতি অনুসৃত হয়েছে। প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে রাজস্ব আদায় আধুনিক হবে। নতুন আইনে সবকিছু অনলাইন নির্ভর হওয়ায় প্রতিদিনের রাজস্ব আদয়ের তথ্য দিন শেষে মুহূর্তের মধ্যে পাওয়া যাবে। আমদানি ও রপ্তানি সংক্রান্ত
যেকোন তথ্য যেকোন স্থান থেকে দিন শেষে পাওয়া সম্ভব হবে।
(৩) সরলতার নীতি :
মূল্য
সংযোজন কর ও সম্পূরক
শুল্ক আইন, ২০১২ এর মুসক ব্যবস্থা
এর নিয়মাবলী অনেক সরল ও যুগপযোগী যাতে
কর দাতা সহজে আইন পড়তে ও বুঝতে পারে
এবং কর প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা রাখতে পারে। আইনটি অনেক সহজ এবং একক করহার বিশিষ্ট হওয়ায় সবার ওপর করভার সমান পড়বে। তাই পূর্বের ম্যানুয়েল ব্যবস্থা থেকে আধূনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কাগজের জটিলতা হ্রাস পাবে। জটিলতা হ্রাস পাওয়ার ফলে কর প্রদানে ব্যবসায়ীরা
উৎসাহ পাবে এবং তাদের মূলবান সময় ব্যবসার কাজে লাগাতে পারবে।
(৪) কার্যকারীতা ও সততা :
প্রযুক্তির
ব্যবহারের ফলে সকল প্রকার তথ্য তথ্যাগারে সংরক্ষণ করার ফলে যেকোন সময় যেকোন তথ্য যাচাই করা সম্ভব হবে। এর ফলে মুসক
ফাঁকি হ্রাস পাবে। আমদানী ও রপ্তানী তথ্য,
আর্থিক প্রতিবেদন ও রেয়াত সংক্রান্ত
তথ্য যাচাই করে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়া যাবে। এর ফলে মুসক
ফাঁকির প্রবণতা ও সুযোগ হ্রাস
পাবে। ফলে আইনের কার্যকারীতা ও সততা বৃদ্ধি
পাবে।
(৫) নমনীয়তার নীতি :
মূল্য
সংযোজন কর ও সম্পূরক
শুল্ক আইন, ২০১২ নতুন মুসক আইন পূর্বের আইনের তুলনায় অনেক নমনীয়। পূর্বের আইনের অনেক বিধি বিধান পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন আইনে কোন ব্যবসায়ীকে আর মুসক অফিসে
আসতে হবে না। অনলাইন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ২৪ ঘন্টাই তিনি
তার সুবিধামত মুসক সংক্রান্ত কার্য পরিচালনা করতে পারবেন। যেমন মুসক রিটার্ন দেয়ার জন্য তাকে ১৫ তারিখের মধ্যে
অফিসে আসতে হবে না। তিনি ১৫ তারিখ রাত
১২টার মধ্যে যেকোন স্থান থেকে অনলাইনে তার রিটার্ন জমা দিতে পারবেন। এতোদিন মুসক-১১ চালান ৫
কার্য দিবসের মধ্যে মুসক অফিসে জমা দেয়ার বিধান ছিল। নতুন আইনে আর জমা দিতে
হবে না। নতুন মুসক আইনে এসব পরিবর্তনের কারণে কাজের গতি বৃদ্ধি পাবে। নতুন মুসক আইনের অন্যতম নীতি হলো নমনীয়তার নীতি।
(৬) নিশ্চয়তার নীতি :
ব্যবসার
একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসঙ্গ হলো মূসক। প্রতিবছর যদি মূসকের নীতিতে বা করহাওে পরিবর্তন
আসে তাহলে বিনিয়োগকারী অনিশ্চয়তায় ভোগেন। অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীগণ বড় বিনিয়োগ করার
সাহস পান না। পুরাতন বিনিয়োগকারীগণও ব্যবসা নিয়ে সবসময় অনিশ্চয়তায় থাকনে। নতুন মূসক ব্যবস্থা নীতির নিশ্চয়তা প্রদান করে। বোর্ড অহরহ নীতির পরিবর্তন করতে পারবে না। আইন তাদেও সেই ক্ষমতা দেয়নি। ফলে একটি নীতি পরিবর্তন করতে হলে আইনের মাধ্যমে করতে হবে।
(৭) মিতব্যয়ীতার নীতি :
মূল্য
সংযোজন কর ও সম্পূরক
শুল্ক আইন, ২০১২ এ মুসক আইনে
অন্যতম নীতি হলো মিতব্যয়ীতার নীতি। মূসক প্রদানের খরচ তখনই যুক্তিযুক্ত হবে যখন মূসক ব্যবস্থা সহজ হবে। করদাতাদেও প্রতিপালন খরচ হ্রাস পাবে। কোনো কাজ সম্পন্নের সময়ও কম লাগবে। ফলে
মূসক ব্যবস্থা বাস্তবায়নে করদাতার খরচ কম হবে।
অপর
দিকে সরকার জনগণের নিকট থেকে যে পরিমাণ মূসক
আদায় করে একই খরচ দিয়ে তারচেয়ে বেশি মূসক আদায় করতে পারলে আদায়জনিত ব্যয়ও কম হবে।
(৮) উৎপাদনশীলতার নীতি :
নতুন
মুসক ব্যবস্থার অন্নতম নীতি হলো উৎপাদনশীলতা। এ আইনে সকল
কার্যক্রম অনলাইন নির্ভর হওয়ায় মূসক নিবন্ধন, দাখিলপত্র জমা, হিসাবসংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে কাজের গতি আগের চেয়ে অনেক বৃদ্ধি পাবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা হ্রাস পাবে। নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টায় একজন কর্মী আগের চেয়ে বেশি কাজ দক্ষতার সাথে বেশি পরিমাণ কাজ করতে পারবে। ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। একটি উদাহরণ-যেমন মূসক রেজিষ্ট্রেশন করতে হলে আগে আবেদন করে ২ কার্য দিবস
অপেক্ষা করতে হতো। এখন অনলাইনে ৫ মিনিটের মধ্যে
মুসক অফিসে না গিয়ে মূসক
নিবন্ধন করা যায়।
You Can Read Also: NBR eLearning Basic Principles of VAT Course Lesson-3