NBR eLearning Basic Principles of VAT Course Lesson-1




লেসন-: মূল্য সংযোজন করের মৌলিক বিষয়াদি

মূসক কি? 

মূসক এমন একটি পরোক্ষ কর যা ভোক্তা নিবন্ধিত ব্যক্তির মাধ্যমে সরকারকে পরিশোধ করেন।
সরবরাহের ওপর প্রদেয় করের বিপরীতে উপকরণ কর সমন্বয় করে সরবরাহের প্রতিটি মূল্যস্তরের প্রকৃত সংযোজনের ওপর আরোপিত কর-ই ঐ স্তরের মূল্য সংযোজন কর বা মূসক।
ধরা যাক, কোনো একটি পণ্য ১,০০০ টাকায় ক্রয় করে ১,৫০০ টাকায় বিক্রয় করা হলে ঐ পণ্যটি ক্রয়ে ১,০০০ টাকায় ১৩০.৪৩ টাকা মূসক অন্তর্ভুক্ত ছিল। (হিসাব: ১০০০*১৫/১১৫ তদ্রুপ, পণ্যটি ১,৫০০ টাকায় বিক্রয় করলে এর মধ্যে ১৯৫.৬৫ টাকা মূসক অন্তর্ভুক্ত থাকবে। (হিসাব: ১৫০০*১৫/১১৫)
পণ্যটি ১,৫০০ টাকায় বিক্রয় করায় প্রকৃত সংযোজন হবে ৫০০ টাকা এবং বিক্রেতা পণ্যটি ক্রয়কালে মূসকসহ মূল্য পরিশোধ করায় ক্রয়স্তরের অন্তর্ভুক্ত মূসক ফেরত নিয়ে বিক্রয়স্তরে প্রকৃত সংযোজনের উপর অর্থাৎ ৫০০ টাকার উপর মূসক পরিশোধ করবেন।
            ১,৫০০ টাকার উপর পরিশোধযোগ্য মূসক ১৯৫.৬৫ টাকা
            ১,০০০ টাকায় অন্তর্ভুক্ত মূসক                ১৩০.৪৩ টাকা
            নীট ৫০০ টাকার উপর পরিশোধযোগ্য মূসক ৬৫.২২ টাকা
               (হিসাব: ৫০০*১৫/১১৫)
            বিক্রেতার হিসাবের পদ্ধতি       = (১,৫০০*১৫/১১৫ ) - (১,০০০*১৫/১১৫)
                = ১৯৫.৬৫ - ১৩০.৪৩
                = ৬৫.২২ টাকা

মূসক কে পরিশোধ করেন?

মূল্য সংযোজন কর বা মূসক ব্যবস্থা হচ্ছে সরবরাহের বা বিক্রয়ের বিপরীতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে উপকরণ কর রেয়াত ভিত্তিক কর ব্যবস্থা। সরবরাহকারী কর্তৃক পণ্য বা সেবা সরবরাহকালে সরবরাহ মূল্যে অন্তর্ভুক্ত মূসকের বিপরীতে পণ্য বা সেবার ক্রয়কালে ক্রয়মূল্যের ওপর পরিশোধিত মূসক রেয়াত হিসেবে গ্রহণ করেন এবং নীট মূসক পরিশোধ করেন। অর্থাৎ বিক্রেতা ক্রেতার নিকট হতে প্রাপ্ত মূল্যের মধ্যেই মূসক আদায় করে ক্রয়স্তরের মূসক রেয়াত নিয়ে নীট মূসক সরকারি কোষাগারে জমা করে থাকেন।
মূল্য সংযোজন কর ভোক্তা কর হওয়ায় পণ্য বা সেবার ওপর প্রযোজ্য সমুদয় মূল্য সংযোজন কর ভোক্তাই পরিশোধ করবেন। মধ্যবর্তী প্রক্রিয়া হিসেবে উৎপাদনকারী, সরবরাহকারী সবাই প্রত্যেকটি ধাপে বিক্রয়স্তরে সরকারের পক্ষে মূসক আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দেবেন।

মূসকদাতা কে?

মূল্য সংযোজন কর ব্যবস্থায় পণ্য বা সেবার সর্বশেষ ভোক্তা হলেন মূসকদাতা। সরবরাহকারী বা বিক্রেতা বিক্রয়ের প্রতিটি স্তরে ক্রেতার নিকট হতে মূসক আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে থাকেন। যেহেতু ভোক্তাই হলেন সর্বশেষ ক্রেতা, সেহেতু চূড়ান্ত মূসকের ভার ভোক্তার ওপরই বর্তায়। সরবরাহকারী বা বিক্রেতা শুধু বিক্রয়স্তরের আদায়কৃত মূসক সরকারি কোষাগারে জমা দিয়ে থাকেন।

আমি কেন মূসক পরিশোধ করব?

নিম্নবর্ণিত কারণে আপনি মূসক পরিশোধ করবেন:
() রাষ্ট্রীয় আইন প্রতিপালনে কর প্রদান একজন নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব।
(দেশের আর্থ-সামাজিক সকল উন্নয়নের কাজ করের টাকা দিয়েই সম্পন্ন হয়। তাই দেশের উন্নয়নে অংশগ্রহণ আপনার নাগরিক এবং আইনগত দায়িত্ব।

বাংলাদেশে কখন মূসক চালু হয়?

বাংলাদেশে ১৯৯১ সালের জুলাই মূল্য সংযোজন কর চালু হয়। ২০১৭ সালের জুলাই হতে নতুন ভ্যাট আইন চালু হবে।

মূসকের হার কত?

মূসকের আদর্শ হার ১৫% আমদানি সরবরাহের ক্ষেত্রে মূসকের হার ১৫% এবং রপ্তানির ক্ষেত্রে মূসকের হার % প্রযোজ্য।

১৯৯১ সনের মূসক ব্যবস্থার আওতায় সর্বশেষ মূসক হারগুলো কত

১৯৯১ সনের মূসক ব্যবস্থার আওতায় মূল্য সংযোজনের করের আদর্শহার ১৫% সর্বশেষ অর্থবছর (২০১৫-১৬) এর বাজেট অনুযায়ী আদর্শহার ব্যতীত কতিপয় সেবার ক্ষেত্রে সংকুচিত ভিত্তিমূল্য-ভিত্তিক ১০টি নি¤œতর হার বিদ্যমান আছে। যথা.%, %, .%, %, %, .%, %, .%, % এবং ১০%

মূসক নিবন্ধন টার্নওভার কর তালিকাভুক্তির সীমা কত?

নতুন মূসক ব্যবস্থায় নিবন্ধন সীমা ৮০ লক্ষ টাকা এবং তালিকাভুক্তির সীমা ৩০ লক্ষ টাকা।

মূসক ব্যবস্থা কিভাবে কাজ করে

সরবরাহের প্রতিটি স্তরে উপকরণ কর রেয়াত গ্রহণের মাধ্যমে মূসক ব্যবস্থা কাজ করে। করদাতা আইন বিধি অনুযায়ী হিসাব সংরক্ষণের মাধ্যমে প্রত্যেক কর মেয়াদে ক্রয়কৃত উপকরণ বা পণ্যের ওপর পরিশোধিত মূল্য সংযোজন কর রেয়াত হিসাবে গ্রহণ করেন। সরবরাহের প্রতিটি স্তরেই রেয়াত গ্রহণ মূল্য সংযোজনের ওপর মূল্য সংযোজন কর প্রদানের মাধ্যমে মূসক চেইন সম্পন্ন হয়।

পর্যায়
মূল্য সংযোজন কর আরোপযোগ্য মূল্য
মূল্য সংযোজন কর (কর হার ১৫%)
রেয়াত
নীট মূসক
সংযোজন
আমদানি/উপকরণ অর্জন পর্যায়
ধরা যাক, আমদানি/উপকরণ অর্জন পর্যায়ে মূল্য ১০০০/- 
১০০০/-
১৩০.৪৩/-
/-
১৩০.৪৩/-
১০০০/-
উৎপাদন পর্যায় ধরা যাক, উৎপাদন পর্যায়ে উৎপাদনকারীর বিক্রয়মূল্য ১৫০০/-
১৫০০/-
১৯৫.৬৫/-
১৩০.৪৩/-
৬৫.২২/-
৫০০/-
পাইকারী পর্যায়
ধরা যাক, পাইকারী পর্যায়ে বিক্রেতার বিক্রয়মূল্য ২০০০/-
২০০০/-
২৬০.৮৭/-
১৯৫.৬৫/-
৬৫.২২/-
৫০০/-
খুচরা পর্যায়
ধরা যাক, খুচরা পর্যায়ে বিক্রয়মূল্য ২৫০০/-
২৫০০/-
৩২৬.০৯/-
২৬০.৮৭/-
৬৫.২২/-
৫০০/-
ভোক্তার পরিশোধিত কর (চূড়ান্ত মূল্য ২৫০০/- এর উপর)
৩২৬.০৯/-




আমি কিভাবে বুঝবো যে, আমার ব্যবসায়ে মূসক প্রযোজ্য হবে কিনা?

আইনের প্রথম তফসিলে বর্ণিত পণ্য বা সেবা যদি আপনার অর্থনৈতিক কার্যক্রমের আওতাভুক্ত হয়, তাহলে আইন অনুসারে আপনার ব্যবসায়ে মূসকের বাধ্যবাধকতা উদ্ভব হবে না।
তাছাড়া আপনার ব্যবসায়ের বাৎসরিক টার্নওভার এর ভিত্তিতে ব্যবসায়ের মূসক প্রযোজ্যতা নির্ধারণ করতে পারবেন (প্রশ্ন . দেখুন) তবে আপনার ব্যবসায়ের বাৎসরিক টার্নওভার যাই হোক না কেন আপনি চাইলে মূসক নিবন্ধন গ্রহণ করে মূসক প্রদান করতে পারবেন।

মূল্য সংযোজন করের বৈশিষ্ট্য

১। মূসক একটি পরোক্ষ কর ব্যবস্থা। ব্যবসায়ী আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান করলেও তা প্রকৃত পক্ষে ভোক্তা কর্তৃক পরিশোধিত হয়।
২। ইহা একটি ভোগভিত্তিক কর ব্যবস্থা। তিনি যখনই কোনো ব্যয় করবেন, তখনই তার ওপর মূসক আরোপিত হবে।
৩। একক হার বিশিষ্ট কর। সরবরাহ মূল্যের মধ্যে ১৫% মূসক অর্ন্তভুক্ত থাকে।
৪। এটি একটি চালানভিত্তিক কর ব্যবস্থা। করযোগ্য সরবরাহের সময় মূসক চালান ইস্যু করতে হয়।
৫। বিস্তৃত রেয়াত সুবিধা। নিবন্ধিত ব্যক্তি তার ক্রয়ের বিপরীতে পরিশোধিত কর বিক্রয়ের সময় আদায়কৃত মূসক হতে রেয়াত গ্রহণ করে করভার পরবর্তী ক্রেতার ওপর ন্যাস্ত করে।
৬। সরাসরি প্রচ্ছন্ন - সবধরণের রপ্তানি শূন্য হার বিশিষ্ট।
৭। প্রদেয় করের চেয়ে রেয়াত বেশি হলে তা ফেরত পাওয়া যায়।
৮। মূসক একটি হিসাব-ভিত্তিক কর ব্যবস্থা। ব্যবসায়ের হিসাবের মধ্যেই মূসকের হিসাব রাখতে হয়।
৯। মূসক একটি স্ব-নির্ধারণী কর ব্যবস্থা। করদাতা নিজেই তার করদায়িতা নিরূপণ, হিসাবরক্ষণ কর পরিশোধ করেন।
১০। মূসক একটি অডিট নির্ভর কর ব্যবস্থা। কর কর্মকর্তাদের প্রধান কাজ হয় অডিটের মাধ্যমে করদাতার করদায়িতায় ত্রুটি থাকলে তা নির্ধারণ করা।

নতুন মূসক আইনের আওতায় কর কাকে বলে?

নতুন মূসক আইনের আওতায় কর বলতে মূসক, টার্নওভার কর সম্পূরক শুল্ক এবং বকেয়া আদায়ের উদ্দেশ্যে সুদ, জরিমানা অর্থদ-কে বোঝাবে।

মূসক ব্যবস্থায় ভোক্তার দায়িত্ব কী?

ক্রয়ের সময় বিক্রেতার নিকট হতে ক্রয় চালান বুঝে নেওয়াই একজন ভোক্তার দায়িত্ব। কেননা তিনি যদি ঠিকমতো মূসক চালান বুঝে নেন তাহলে এই চালানে অন্তর্ভুক্ত মূসক সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা নিশ্চিত করা যাবে।

একজন বিক্রেতা মূসক চালানপত্র না দিতে চাইলে ক্রেতা কী করতে পারেন?

মূসক চালানপত্র প্রদান করা যেমন একজন বিক্রেতার দায়িত্ব, তেমনি চালানপত্র ঠিকভাবে বুঝে নেওয়াও একজন ক্রেতার দায়িত্ব। কোনো কারণে বিক্রেতা মূসক চালানপত্র দিতে না চাইলে তিনি দায়িত্ব সম্পর্কে বিক্রেতাকে অবহিত করবেন, কেননা ঠিকমতো মূসক চালান বুঝে নেওয়া হলে চালানে অন্তর্ভুক্ত মূসক সরকারি কোষাগারে যথাযথভাবে জমা হবে। এর পরেও বিক্রেতা মূসক চালানপত্র দিতে না চাইলে তিনি মূসক কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করতে পারেন অথবা নিকটবর্তী মূসক কর্তৃপক্ষকেও জানাতে পারবেন। এছাড়াও তিনি facebook.com/VATOnlineBD পেইজে বা কন্টাক্ট সেন্টার নম্বর ১৬৫৫৫ অভিযোগ করতে পারেন।

You Can Read Also: NBR eLearning Basic Principles of VAT Course Lesson-2

Post a Comment

Previous Post Next Post