শহুরে
মানুষদের প্রকৃতির খুব কাছাকাছি যাওয়ার সুযোগ ঘটে বছরে খুব কম সময়ই। আর
তাই ছুটির দিনগুলোকে একান্ত প্রকৃতির সাথে বিলিন করতে প্রকৃতি প্রেমিরা যেতে পারেন জামালপুরের লাউচাপড়া। ওয়াচ টাওয়ারের উপরে উঠে যত দূরে চোখ
যায় শুধুই সবুজের বিস্তীর্ণ বিস্তার। থাকার জায়গাগুলো আটসাঁট হলেও মিলবে প্রকৃতির হিমেল ছোঁয়া। ছুটির দিনগুলো কেটে যাবে কাঠ ঠোকরা আর হলদে পাখির
কলতানে।
জামালপুর
জেলার বকশিগঞ্জের লাউচাপড়া পাহাড়িকা অবকাশ কেন্দ্রে বেড়াতে গেলে এমন কিছুর সন্ধান পেতে পারেন। প্রথমেই জেনে নিন লাউচাপড়ায় যাতায়াত তথ্য। জায়গাটি জামালপুর জেলার অধীনে হলেও যাওয়ার সহজপথ হলো শেরপুর হয়ে। ঢাকা থেকে সরাসরি শেরপুরে যায় ড্রীমল্যান্ড পরিবহনের বাস। ভাড়া ১১০ টাকা। ড্রীমল্যান্ড স্পেশালে ভাড়া ১৪০ টাকা। শেরপুর থেকে বাসে বকশীগঞ্জের ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা। সেখান
থেকে রিকশা কিংবা ভ্যানে লাউচাপড়ার ভাড়া জনপ্রতি ২০-২৫ টাকা।
বকশিগঞ্জ ছেড়ে যতোই সামনে এগুতে থাকবেন চারিদিকটা যেন ততোই সবুজ। কোথাও কোথাও চলতি পথে সবুজের খেলা দেখতে দেখতে এক সময়ে এসে
পৌঁছুবেন এক পাহাড়ের পাদদেশে।
চারিদিকে গারো পাহাড়ের সবুজ বন। পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকা
বাঁকা একটি সিঁড়ি উঠে গেছে একেবারে চূড়ায়। সেখানে আবার রয়েছে মস্তবড় এক ওয়াচটাওয়ার। দশ-বারোটি সিঁড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠলে চারিদিকে সবুজ ছাড়া কিছুই আর চোখে পড়েনা।
দূরে দেখা যায় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের আকাশ ছোঁয়া সব পাহাড়। চারিদিকটা
কেমন যেন ছবির মতো মনে হয়। এই পাহাড়ি জঙ্গলে
আছে নানা জাতের পশু পাখি। ধান পাকার মৌশুমে আবার মেঘালয় থেকে চলে আসে বুনো হাতির দল। কাঠ ঠোকরা, হলদে পাখি, কালিম পাখি আরো কত ধরণের পাখি
চোখে পড়বে এখানে এলে। লাউচাপড়ার এ পাহাড় বেড়িয়ে
ক্লান্ত হলে নিচে নেমে একটু বসতে পারেন লেকের ধারে। সবুজ ঘাসের মাঝে কৃত্রিম এ লেকটি বেশ
সুন্দর। লেকের পাশে কোন গাছের ছায়ায় বসে কাটাতে পারেন কিছুটা সময়। এ সময়টাতে গেলে
বেড়িয়ে আনন্দ পাবেন। কেননা পিকনিক মৌসুমে এখানে থাকে পিকনিক পার্টির ভীড়। পুরো জায়গাটি অবসর বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে জামালপুর জেলা পরিষদ। এ অবসর কেন্দ্রে
প্রবেশে কোন টাকা লাগে না। তবে কোন বাহন নিয়ে গেলে তার জন্য পার্কিং ফি দিতে হবে।
পাহাড়তো দেখা হলো, এবার দেখে আসতে পারেন এখানকার উপজাতিদের ছোট্ট একটি গ্রাম। গারো উপজাতিদের এ গ্রামের নাম
দিকলাকোনা। এ গ্রামে বাইশ
পরিবারে রয়েছে একশ জন গারো। তারা
সবাই খৃষ্ট ধর্মাবলম্বী। গ্রামে প্রবেশের আগে কথা বলতে পারেন এ গ্রামের মাতুব্বর
প্রীতি সন সারমার সাথে।
ভীষণ সদালাপি এ লোকটির আতিথেয়তায়
মুগ্ধ হবেন আপনি। প্রতিবছর বড়দিন, ইংরেজী নববর্ষ, ইস্টার সানডে উপলক্ষে এ গ্রামে হয়
নানান উৎসব। দিকলাকোনা গ্রামের শুরুতেই রয়েছে‘দিকলাকোনা সালগিত্তাল হোস্টেল’। লাউচাপড়ায় রাত
কাটানো হতে পারে আপনার জীবনের স্মরণীয় অভিজ্ঞতা। এখানকার শান্ত নিরিবিলি পরিবেশ রাতে যেন আরো শান্ত, আরো স্নিগ্ধ। রাতে এখানে থাকার জন্য দুটি রেস্ট হাউস অছে। একটি জামালপুর জেলা পরিষদের পাহাড়িকা বাংলো এবং অন্যটি ব্যক্তি মালিকানাধীন বনফুল রিজর্ট। জেলা পরিষদের রেস্ট হাউসে থাকতে হলে আগে থেকে অনুমতি নিয়ে আসতে হবে। যোগাযোগ করতে হবে প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা, জেলা পরিষদ, জামালপুর। ফোন- ০৯৮১-৬২৭১৬, ০৯৮১-৬৩৫১৪, ০৯৮১-৬৩২৪০। তবে বেসরকারি বনফুল রিজর্টটি আরো বেশি সজ্জিত ও সুযোগ সুবিধা
সম্বলিত। এই রিজর্টে সাধারণ
কক্ষের ভাড়া ১০০০ টাকা এবং তাপনিয়ন্ত্রিত কক্ষের ভাড়া ১৫০০ টাকা। যোগাযোগ- রিভার এন্ড গ্রীন ট্যুরস, এম আর সেন্টার,
(৭ম তলা), বাড়ি-৪৯, সড়ক ১৭, বনানি বাজার, ঢাকা। ফোন- ৮৮২৬৭৫৯, ০৭৮৯-২২৪৫৯৩।
তথ্য
সংক্ষেপঃ রিসোর্টে পার্কিং ফি প্রতিটি বাস
কিংবা কোস্টারের জন্য ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০টাকা, জীপ, টেম্পো, কার ৫০ টাকা, বেবি
টেক্সি, ঘোড়ার গাড়ি ২০ টাকা, মোটর
সাইকেল, ভ্যান গাড়ি ১০ টাকা, রিকশা
৫ টাকা, বাই সাইকেল ২ টাকা। এছাড়া
লেকে নৌ বিহার করতেজনপ্রতি
লাগবে ১০ টাকা, ওয়াচ
টাওয়ার উঠতে ৩ টাকা এবং
পিকনিক পার্টির রান্নাঘর ওপ্রতি চুলা ব্যবহারের জন্য দিতে হবে ৫০ টাকা।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
ঢাকা
হতে বাসে কিংবা জামালপুর বা শেরপুর হতে
সিএনজিতে বকশীগঞ্জ গিয়ে সেখান হতে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে ধানুয়া-কামালপুরে যেতে হবে।