পাথরঘাটা
উপজেলার একটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান হরিণঘাটা । এখানে সমুদ্রের
কোলঘেষে একটি সুন্দর বনভূমি রয়েছে।কদিকে বিস্তীর্ণ সাগরের হাতছানি আর অন্যদিকে অকৃত্রিম
বনের মাঝে ছড়িয়ে থাকা সবুজের সমারোহ যাদের মুগ্ধ করে তাদের জন্য এই দেশের মাঝেই
বেড়ানোর চমত্কার একটি স্থান হতে পারে হরিণঘাটা। বরিশাল বিভাগের দক্ষিণ প্রান্তে বরগুনা জেলায় অবস্থিত এই হরিণঘাটায় এসে
একদিকে যেমন উপভোগ করা যায় সাগরের মাঝে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের মোহনীয়
দৃশ্য, তেমনি দেখা মেলে নানা প্রজাতির গাছের সমারোহে গড়ে ওঠা সবুজ নিসর্গ আর হরেক রকম
বণ্যপ্রাণীরও। বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলা সদর তালতলী থেকে প্রায় আট কিলোমিটার দূরে
হরিণঘাটা বাজারের পাশ থেকেই এই বনের শুরু।
স্থানীয়দের কাছে দীর্ঘদিন ধরে হরিণঘাটার এই বন ফাতরার
বন নামে পরিচিত হলেও ২০১০ সালে বনবিভাগের আমতলী রেঞ্জের টেংরাগিরি (সখিনা) বিটের এ জায়গাটিকে বন্যপ্রাণী
অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করে এর নাম দেওয়া
হয় টেংরাগিরি বণ্যপ্রাণী অভয়ারণ্য। এ বনের পূর্ব
দিকে রয়েছে কুয়াকাটা, পশ্চিমে সুন্দরবন, উত্তর পাশে রাখাইনদের বেশ কিছু বসতি এবং দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর। প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট এ বন নানান
গাছপালায় সমৃদ্ধ। কেওড়া, গরাণ, গেওয়া, ওড়া প্রভৃতি শ্বাসমূলীয় গাছ বনের প্রধান বৃক্ষ। এ ছাড়া বনে
দেখা মেলে চিত্রা হরিণ, বানর, বন বিড়াল, বন্যশুকরসহ
নানান বন্যপ্রাণীর। এ ছাড়া নানা
প্রজাতির পাখি আর গুঁইসাপসহ একাধিক
প্রজাতির সাপেরও আবাসস্থল এই বন। তবে
হরিণঘাটায় অবস্থিত এই বনের সবেচেয়ে
আকর্ষণীয় দিকগুলোর একটি হলো বনের ভেতর সর্পিলাকারে ছড়িয়ে থাকা একাধিক খাল। জোয়ারের সময় যখন খালগুলো পানিতে পরিপূর্ণ থাকে তখন ছোট ছোট নৌকায় করে উপভোগ করা যায় বনের মধ্যকার সবুজের সমারোহ। এ ছাড়া এই
বনাঞ্চলের ঠিক পাশেই থাকা লালদিয়ার চর নামে পরিচিত
সমুদ্র সৈকতও পর্যটকদের ভীষণভাবে আকৃষ্ট করে। হরিণঘাটার বনের ঠিক শেষ প্রান্তে বঙ্গোপসাগর ও বিষখালী নদীর
মোহনায় জেগে ওঠা এই সৈকতে মানুষের
উপস্থিতি অনেক কম বলে এখানে
নানা প্রজাতির পাখির নির্বিঘ্ন বিচরণ চোখে পড়ে। এ ছাড়া সৈকতে
ঘুরে বেড়ানো লাল কাঁকড়ার দলও প্রায়শই তৈরি করে দেখার মতো এক দৃশ্য।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
হরিণঘাটার
বন বা লালদিয়ার চরে
আসতে হলে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে সড়ক বা নদীপথে প্রথমে
বরগুনা আসতে হবে। তারপর সেখান থেকে বাস, টেম্পু বা নৌকায় করে
তালতলী হয়ে যাওয়া যাবে হরিণঘাটায়।