লুর্দের রাণী মা মারীয়া ধর্মপল্লী তথা বনপাড়া ক্যাথলিক মিশন। খ্রিস্টধর্ম পরিচালনা কর্তৃপক্ষকে বলা হয় খ্রিস্টমন্ডলী বা সংক্ষিপ্তাকারে শুধু মন্ডলী। মন্ডলী কর্তৃপক্ষের মূল পরিচালনা কেন্দ্র ভাটিকান বা রোম। স্থানীয়ভাবে খিস্টধর্ম বিশ্বাসী জনসাধারনকে পরিচালনা ও আধ্যাত্মিক পরিচর্যা করা/সেবা দানের উদ্দেশ্যে গঠিত/পরিচালিত একটি সাংগঠনিক কর্মএলাকাকে ধর্মপল্লী বলা হয়। ‘লুর্দের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লী’ ঈশ্বরপুত্র যীশু খ্রিস্টের জাগতিক জননী মারীয়া বা মরিয়ম-এর পূণ্য নামের স্মৃতিতে উৎসর্গিত।
নাটোর
জেলার দক্ষিন সিমানায় বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া পৌরসভার ৫টি ও ১ নং
জোয়াড়ী ও ৫ নং
মাঝগ্রাম ইউনিয়নের ২টি সহ মোট ০৭টি
গ্রাম নিয়ে এই ধর্ম পল্লী
প্রতিষ্ঠিত। ঐতিহ্যবাহী বড়াল নদীর দক্ষিনে বনপাড়া নামক একটি গ্রামে ধর্মপল্লীর জন্য নির্ধারিত র্গীজাটি অবস্থিত। যেখানে ১৯৪০ সালের দিকে প্রথম স্বর্গীয় ফাদার থমাস কাত্তানের(পিমে), একজন ইতালীয় ধর্মযাজক সর্ব প্রথম আসেন এবং ছবিতে দেওয়া গীর্জাঘরটি স্থাপিত হয় ১৯৫৮ সালে।
ধর্মপল্লীর
অর্ন্তগত গ্রামগুলিতে প্রায় ৭ হাজার ক্যাথমিক
খ্রিস্টধর্ম বিশ্বাসী মানুষ বসবাস করেন। খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণের মধ্যে ৯৫ শতাংশ বাঙ্গালী
এবং ৫ শতাংশ সাঁওতাল
ও অন্যান্য আদিবাসী। সাধারণত, খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণ এলাকার গ্রামগুলোতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীগণের সাথে (ইসলাম ধর্মাবলম্বী- মুসলমান ও সনাতন ধর্মাবলম্বী-হিন্দু) মিলেমিশে পাশাপাশি বসত করেন।
ধর্মপল্লী
বা গির্জা প্রশাসনের অধিনে একটি হাই স্কুল (সেন্ট যোসেফস্ উচ্চ বিদ্যালয়) ও দুটি প্রাথমিক
বিদ্যালয় (সেন্ট যোসেফস্ প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সেন্ট জেভিয়ার
প্রাথমিক বিদ্যালয়) পরিচালিত হয়। এছাড়া প্রায় ৪৫০ দরিদ্র আদিবাসী ছাত্র-ছাত্রীর অবস্থানের জন্য পৃথক ছাত্র ও ছাত্রীনিবাস পরিচালিত
হয়। এলাকার হাজার হাজার দরিদ্র নারীর অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নের জন্য
একটি সেলাই কেন্দ্র পরিচালিত হয়। এছাড়া এলাকার প্রসূতি মায়েদের সেবা দানের জন্য উনিশ শ ষাটের দশকে
এখানে স্থাপিত হয় দাতব্য চিকিৎসা
কেন্দ্র যা এলাকার হাজার
হাজার প্রসূতি মাকে নিরাপদ মাতৃত্বে সহায়তা প্রদান করেছে। ধর্মপল্লী কর্তৃপক্ষের ইচ্ছা, আন্তরিক প্রচেষ্টা ও সহযোগীতায় এখানে
বহু ব্রীজ-কালভাট ও রাস্তাঘাট নির্মিত
রয়েছে। মূলত এ এলাকার শিক্ষা,
সামাজিক, অর্থনৈতিক, যোগাযোগ ও স্বাস্থ্য খাতে
উন্নয়নে এখানকার গির্জা কর্তৃপক্ষ ও খ্রিস্ট বিশ্বাসীগণের
রয়েছে বিরাট ভূমিকা।
বর্তমানে
দুইজন পুরোহিত ধর্মপল্লী পরিচালনা ও পরিচর্চার দায়িত্বে
নিয়োজিত আছেন। তারা হলেনঃ (১) ফাদার দিনো
জ্যাকোমিনেল্লী, পিমে, (২) ফাদার আন্তনী
হাঁসদা।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
নাটোর
সদর থেকে বাস ও সিএনজি অটোরিক্সা
যোগে প্রথমে বনপাড়া যেতে হবে; ভাড়া- ৩০ টাকা। এরপর
বনপাড়া থেকে রিকশাযোগে সরাসরি চার্চে যাওয়া যায়; রিকশা ভাড়া- ২০ টাকা।