ক্যাপসিকামের উপকারিতা
ভূমিকা:
ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ সারা বিশ্বেই একটি জনপ্রিয় সবজি। বাংলাদেশেও এর জনপ্রিয়তা দিন দিন বাড়ছে। মিষ্টি মরিচের আকার ও আকৃতি বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। তবে সাধারণত ফল গোলাকার ও ত্বক পুরু হয়। মিষ্টি মরিচ আমাদের দেশীয় প্রচলিত সবজি না হলেও ইদানিং এর চাষ প্রসারিত হচ্ছে। বিশেষ করে বড় বড় শহরের আশেপাশে সীমিত পরিসরে কৃষক ভাইয়েরা এর চাষ করে থাকের,
যা অভিজাত হোটেল ও বিভিন্ন বড় বড় মার্কেটে বিক্রি হয়ে থাকে। এ ছাড়া মিষ্টি মরিচের বিদেশে রপ্তানীর সম্ভাবনাও প্রচুর। কারণ সারা বিশ্বে টম্যাটোর পরেই দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ সবজি হচ্ছে ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচ ।
ক্যাপসিকাম পুষ্টিমান ও ব্যবহার:
পুষ্টিমানের দিক থেকে মিষ্টি মরিচ একটি অত্যন্ত মূল্যবান সবজি। প্রচুর পরিমানে ভিটামিন
’সি’
থাকার কারণে এবং অতি সহজেই টবে চাষ করা যায় বলে দেশের জনসাধারণকে মিষ্টি মরিচ খাওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করা যেতে পারে।
চোখ ভালো রাখতে
উচ্চ পরিমান ভিটামিন-এ থাকার কারনে এটি চোখের জন্য খুব উপকারী। বিশেষ কর নাইট ভিশনের জন্য৷এটি লুটেইন নামক ক্যারোটিন সমৃদ্ধ যা চোখের মাস্কুলার ডিজেনারেশন এর ঝুকি কমায়। এটি সাধারনত বয়স জনিত দৃষ্টিশক্তি কমাকে বুঝায়।
অধিক ক্যালোরি ক্ষয় করে
লাল ক্যাপসিকাম থার্মোজেনেসিসকে কার্যকরী করে মেটাবোলিজম হার বৃদ্ধি করে। এরা অন্যান্য মরিচের মতো হার্ট ও ব্লাড প্রেশার বৃদ্ধি না করেই মেটাবোলিজম হার বাড়াতে পারে। এভাবে এটি বাড়তি ওজন কমাতে পারে।
এন্টি ক্যান্সার হিসেবে
এন্টি অক্সিডেন্ট ও ইনফ্লেমেটরি নিউট্রিয়েন্ট বৃদ্ধির মাধ্যমে ক্যান্সার রোধ করে থাকে৷এটি সাস্থ্যের জন্য উপকারী সালফার সরবরাহ করে এবংএনজাইমের মাধ্যমে গ্যাস্ট্রিক ক্যান্সার ও খাদ্যনালীর ক্যান্সার রোধ করে৷ক্যারোটিনয়েড লাইকোপিন প্রোস্টেট ও মূত্রথলির এবং গলদেশ ও অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার রোধে খুবই কার্যকরী ভূমিকা রাখে।
কার্ডিওভাসকুলার বেনিফিট
লাইকোপিন সমৃদ্ধ লাল ক্যাপসিকাম হার্টের জন্য খুবই উপকারী। অন্যদিকে সবুজ ক্যাপসিকাম কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। হোমোসিস্টেইন বেড়ে হার্টের মারাত্বক ক্ষতি হয়। কিন্তু ক্যাপসিকাম এর ভিটামিন-বি৬ এবং ফলেট এর মাত্রা কমিয়ে এনে হার্টকে ভালো রাখে। এর এন্টিঅক্সিডেন্ট,
ভিটামিন-এ,
ভিটামিন-বি৬ হার্টের ফ্রি রেডিক্যালকে দমন করে। এতে রয়েছে ১৬২ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম,
যা রক্তচাপ কমিয়ে হার্টকে ভালো রাখে।
ইমিউন সিস্টেমকে সাহায্য করে
ভিটামিন সি যা এতে রয়েছে,ইমিউন সিস্টেম কে সাহায্য করে এবং শক্ত কোলাজেন তৈরি করে যাতে ত্বক ও জয়েন্ট ভালো থাকে ও আরথ্রাইটিস রোধ করে৷ ভিটামিন-কে রক্তজমাট বাধাতে সাহায্য করে।
আয়রনের ঘাটতি পূরনে
যাদের আয়রনের ঘাটতি রয়েছে,তাদের প্রতিদিন লাল ক্যাপসিকাম খাওয়া উচিত। এটি প্রায় ৩০০%
ভিটামিন-সি সরবারহ করে যা আয়রন তৈরিতে ভূমিকা রাখে ৷
ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়
ক্যাপসিসিন কোলেস্টেরল এর মাত্রা ও ট্রাইগ্লিসারাইড কমায়। আলসার সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং ইমিউনিটিকে উন্নত করে।
ডিটক্সিফাইয়িং প্রোপার্টিস
এটা নাকে এবং ফুসফুসে জমে যাওয়া মিউকাস গ্রন্থিকে পরিষ্কার করে এবং ঘামের মাধ্যমে বিষাক্ততা কমায়।
ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকার, ক্যাপসিকাম খাওয়ার উপকারিতা,
নিয়মিত ক্যাপসিকাম খেলে যা যা উপকার পাবেন
অন্যান্য উপকারিতা
ক্যাপসিকামের জুস গ্যাস্ট্রুইনটেস্টাইনাল বিশৃঙ্খলা দূর করে। যেমন-
আলসার,
ডায়রিয়া,
বদহজম দূর করে। এটি শ্বাসনালীর সমস্যাও কমায়,
যেমন-
এজমা,
এমফেসেমা,
ফুসফুসের আক্রমন। এর জুস পান নাকে রক্তক্ষরণ ও গলাব্যাথা কমায়।
চুলের জন্যও উপকারী ক্যাপসিকাম
সুন্দর, মসৃন লম্বা চুল কার না কাম্য। খাদ্য গ্রহনে একটু সচেতন হলে আপনিও পেতে পারেন কাঙ্খিত মসৃন ও খুশকি মুক্ত চুল। ক্যাপসিকামে রয়েছে এমন সব উপাদান যা আপনার মাথার ত্বকে রক্ত সঞ্চালন বাড়াতে সাহায্য করবে৷নিচে বিশদ বিবরন দেয়া হলো।
সাহায্য করে চুল ও নখ
সবুজ ক্যাপসিকাম এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমান সিলিকন যা চুল ও নখের জন্য উপকারী।
চুলের বৃদ্ধিতে
চুলের গোড়ায় রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে চুলের বৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করে৷লাল ক্যাপসিকাম গ্রোথ স্টিমুলেটর হিসেবে কাজ করে। একই সাথে চুলের পড়া থেকেও রক্ষা করে থাকে। ডিহাইড্রো টেসটোসস্টেরন এর প্রভাবে এটি চুল ঝরে পড়া থেকে রক্ষা করে।
চুলের গোড়া মজবুত করতে
ক্যাপসিকাম গাছ ও ক্যাপসিকাম চুলের জন্য উপকারী হওয়ার অন্যতম একটা কারন হলো এরা ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ছার চুলের জন্য ভিটামিন-সি খুবই জরুরী কেননা এটি আয়রন শোষনের জন্য কাজে লাগে। আর লোহিত রক্ত কনিকাতে যত বেশি আয়রন থাকে চুলের গোড়ায় তত বেশি অক্সিজেন সরবারহ হয়। ভিটামিন-সি কোলাজেন তৈরি করতে সাহায্য করে,
এটি চুলের গোড়া,
রক্ত শিরা এবং ত্বক ভালো রাখে।
চুলের চর্চায়
লাল ক্যাপসিকাম ৫-৬ মিনিট সিদ্ধ করে ঠান্ডা করে নিতে হবে। তারপর সেই পানি তুলার সাহায্যে মাথার ত্বকে দিতে হবে। ১০/১৫ মিনিট পর চুল ধুয়ে ফেলতে হবে। এটা চুলের বৃদ্ধিতে খুবই উপকারী।
Tags:
Beauty & Fitness