জামের স্বাস্থ্য উপকারিতা সমূহ


জামের স্বাস্থ্য উপকারিতা সমূহ

জামের স্বাস্থ্য উপকারিতা সমূহ


ফলের ভাণ্ডারে ভরা আমাদের প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশ আমাদের দেশে অন্যান্য সব ফলের মধ্যে জাম অন্যতম অন্য সব মৌসুমি ফলের তুলনায় জামের স্থায়ীকাল কম হলেও এটি পুষ্টিগুণে অতুলনীয় কালো জাম একটি গ্রীষ্মকালীন ফল গাছটির উদ্ভব দক্ষিণ এশিয়া, সিলন, আন্দামান ফিলিপাইন দ্বীপপুঞ্জে বাংলাদেশ ছাড়াও পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা ইন্দোনেশিয়ায় ফল ব্যাপকভাবে চাষ হয় আমাদের দেশে কুমিল্লা, নোয়াখালী, গাজীপুর, সিলেট, ঢাকা, ময়মনসিংহ, দিনাজপুর টাঙ্গাইল জেলায় জাম বেশি উৎপন্ন হয় জাম সাধারণত তাজা ফল হিসেবে ব্যবহৃত হলেও থেকে রস, স্কোয়াশ অন্যান্য সংরক্ষিত খাদ্য তৈরি করা যায়


জামের ইংরেজি নাম Jambul, Malabar Plum, Jamun ; বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cumini.; জাম Myrtaceae পরিবারভুক্ত একটি ফল এটি বৃক্ষ জাতীয় উদ্ভিদ গাছ ১৪-৬০ ফুট বা এর বেশিও লম্বা হতে পারে কা- সরল, শাখা-প্রশাখাযুক্ত, ছাল ধূসর বর্ণের পাতা সরল, বৃন্তক,  প্রতিমুখ মার্চ-এপ্রিলে ফুল আসে, ফুল সবুজাভ সাদা ফল প্রথমে সবুজ থাকে যা পরে গোলাপি হয় এবং পাকলে কালচে বেগুনি রঙ ধারণ করে স্বাদ মধুর কষভাবযুক্ত ফলের মজ্জা হালকা গোলাপি রসালো পুষ্টিকর ফল জাম দেখতে -. সেন্টিমিটার ডিম্বাকৃতির জাম গাছের বাকল প্রায় ইঞ্চি পুরু হয় বাকলের রঙ ফিকে ধূসর এবং প্রায় মসৃণ কাঠের রঙ লালচে বা ধূসর বর্ণের হয় সার কাঠের লালচে ভাব গভীর হয়ে থাকে কাঠ বেশ শক্ত হয়ে থাকে এবং আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যায় আমাদের দেশে জামের কোনো অনুমোদিত জাত নেই ফলের আকার অনুযায়ী দুই জাতের জাম পাওয়া যায় জাত দুটি হলো খুদি জাত- খুব ছোট এবং মহিষে জাত- বেশ বড় মিষ্টি 
জামের উপকারিতা
জামে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, জিংক, কপার, গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ফ্রুকটোজ, ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট স্যালিসাইলেটসহ অসংখ্য উপাদান এছাড়াও জাম এর অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা রয়েছে জামের উপকারিতা সমূহ নিম্নেবর্ণিত হলো-


১. মানসিকভাবে সতেজ রাখে : জামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ ফ্রুকটোজ রয়েছে, যা মানুষকে জোগায় কাজ করার শক্তি বয়স যত বাড়তে থাকে, মানুষ ততই হারাতে থাকে স্মৃতিশক্তি জাম স্মৃতিশক্তি প্রখর রাখতে সাহায্য করে


২. ডায়াবেটিস নিরাময়ে সাহায্য করে : ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য জাম ভীষণ উপকারী এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত জাম খাওয়ার ফলে . শতাংশ মানুষের ডায়াবেটিক কমে গেছে এটি রক্তে চিনির মাত্রা কমাতে সাহায্য করে জাম ডায়াবেটিক রোগীদের রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করে শরীর সুস্থ রাখে এক চা চামচ জামের বীচির গুঁড়া খালি পেটে প্রতিদিন সকালে খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে


৩. ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ দূর করে : জামে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন সি যার জন্য এটা দেহে ভিটামিন সি-এর ঘাটতি পূরণ করে এবং একই সঙ্গে ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধ করে ছাড়া মুখের দুর্গন্ধ রোধ, দাঁত মজবুত, মাঢ়ি শক্ত এবং মাঢ়ির ক্ষয়রোধেও জামের জুড়ি নেই   এতে বিদ্যমান পানি, লবণ পটাসিয়ামের মতো উপাদান গরমে শরীর ঠা- এবং শারীরিক দুর্বলতাকে দূর করতে সক্ষম জামে দেখা মেলে বেশি পরিমাণের আয়রনেরও, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে


৪. হার্ট ভালো রাখে : জাম রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে হৃদপি- ভালো রাখে এছাড়া শরীরের দূষিত কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমিয়ে দেহের প্রতিটি প্রান্তে অক্সিজেন পৌঁছে দেয়


৫. ওজন নিয়ন্ত্রণ করে : জামে কম পরিমাণে ক্যালোরি থাকে, যা ক্ষতিকর তো নয়ই বরং স্বাস্থ্যসম্মত তাই যারা ওজন নিয়ে চিন্তায় আছেন এবং নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন, তাদের খাদ্য তালিকায় আসতে পারে জাম


৬. উচ্চ রক্তচাপ : পুষ্টিবিদ এবং চিকিৎসকরা তাজা ফল এবং সবজি খাওয়ার সুপারিশ করে থাকেন বিশেষজ্ঞরা বলেন, জামে সেই সব উপাদান আছে যা উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে


৭. ক্যান্সার প্রতিরোধে কালো জাম উপকারী : মানুষের মুখের লালার মধ্যে এক ধরনের রঞ্জক পদার্থ উৎপাদিত হয়, যা হতে ব্যাকটেরিয়ার জন্ম নেয় ধরনের ব্যাকটেরিয়া হতে মুখে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে আর জাম মুখের ভেতর উৎপাদিত ক্যান্সারের সহায়ক ব্যাকটেরিয়ার প্রভাব থেকে দেহকে রক্ষা করে মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে রঙিন ফলের ভেতর যে পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে, এর মধ্যে জামে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ যৌগিক উপাদান রয়েছে যা স্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাহায্য করে জাম লড়াই করে  জরায়ু, ডিম্বাশয় মলদ্বারের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে


৮. সাদা বা রক্ত আমাশয় : জামের কচি পাতার রস - চা-চামচ একটু গরম করে ছেঁকে নিয়ে খেলে - দিনের মধ্যে সেরে যায়


৯. পাতলা দাস্ত অরুচি বমিভাব : পাকা জাম সৈন্ধব লবণ মাখিয়ে - ঘণ্টা রেখে, সেটা চটকে ন্যাকড়ার পুঁটলি বেঁধে টানিয়ে রাখলে যে রস ঝরে পড়বে, সেটা ২০-২৫ ফোঁটা প্রয়োজনবোধে এক চা চামচ পানি মিশিয়ে খেতে দিলে পাতলা দাস্ত, অরুচি বমিভাব কমে যায়


১০. শয্যামূত্র : রোগে শিশু-বৃদ্ধ অনেকেই অসুবিধায় পড়েন এবং অনেক মা-কেও সন্তানের জন্য ভুগতে হয় এক্ষেত্রে - চা চামচ জাম পাতার রস (বয়স অনুপাতে মাত্রা) / চা চামচ গাওয়া ঘি মিশিয়ে প্রতিদিন একবার করে খাওয়ালে এক সপ্তাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপকার হবে


১১. জ্বরের সঙ্গে পেটের দোষ : যাদের জ্বরের সঙ্গে পেটের দোষ থাকে, তারা পাতার রস - চা-চামচ একটু গরম করে ছেঁকে খেলে উপকার হয়


১২. পচা ঘা (ঘৃত) : জামের পাতাকে সিদ্ধ করে সেই কাত্থ দিয়ে ঘা ধুয়ে দিলে - দিনের মধ্যে বিশেষ উপকার পাওয়া যায় এমনকি পশুপাখির ক্ষেত্রেও এটি প্রয়োগ করা যেতে পারে যে ঘা (ক্ষত) তাড়াতাড়ি পুরে উঠছে না, সেখানে জামছালের মিহি গুঁড়া ওই ঘায়ের ওপর ছড়িয়ে দিলে তাড়াতাড়ি পুরে যায়


১৩. রক্তদাসে : জামছালের রস - চা চামচ ছাগলের দুধে মিশিয়ে খেতে দিলে রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে যায়
দাঁতের মাঢ়ির ক্ষতে : যাদের মাঢ়ি আলগা হয়ে গিয়েছে, একটুতে রক্ত পড়ে, তারা জামছালের গুঁড়া দিয়ে দাঁত মাজলে, উপকার হবে


১৪. জামে ফাইটো কেমিক্যালস আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট বিদ্যমান : যা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, সঙ্গে মৌসুমি সর্দি-কাশি থেকে মুক্তি দেয় প্রতিরোধ করে ইনফেকশনের মতো সমস্যারও জামে পাওয়া  গেছে অ্যালার্জিক নামে এক ধরনের এসিডের উপস্থিতি, যা ত্বককে করে শক্তিশালী ক্ষতিকর আলট্রা-ভায়োলেট রশ্মির প্রভাব থেকে ত্বক চুলকে রক্ষা করে অ্যালার্জিক এসিড ক্ষতিকর ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ফাঙ্গাশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে


১৫. চোখের অঙ্গ স্নায়ুগুলোকে কর্মময় : বৃদ্ধ বয়সে চোখের অঙ্গ স্নায়ুগুলোকে কর্মময় করতে সাহায্য করে জাম চোখের ইনফেকশনজনিত সমস্যা সংক্রামক (ছোঁয়াচে) রোগের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে রাতকানা রোগ এবং যাদের চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে তাদের জন্য জাম ভীষণ উপকারী আমাদের নাক, কান, মুখের ছিদ্র, চোখের কোনা দিয়ে বাতাসে ভাসমান রোগজীবাণু দেহের ভেতর প্রবেশ করে জামের রস জীবাণুকে মেরে ফেলে


১৬. জৈব কীটনাশক হিসেবে ব্যবহার : জাম পাতার রস শস্য বীজ শোধনে ব্যবহার করা যায় পাতা পিসে রস করে : অনুপাতে দ্রবণ তৈরি করে শস্য সবজি বীজ শোধন করা যায়


সতর্কতা :
আধাপাকা (ডাঁসা) জাম খাওয়া উচিত নয় খালি পেটে জাম খাবেন না এবং জাম খাওয়ার পর দুধ খাবেন না পাকা ফল ভরা পেটে খেলে অতিরিক্ত অ্যাসিডিটি গ্যাস্ট্রিকভাব হতে পারে

Post a Comment

Previous Post Next Post