সংক্ষিপ্ত
বর্ণনা:
দেশের
দশম সিটি কর্পোরেশন রংপুরের সকল সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের প্রাণকেন্দ্র ঐতিহ্যবাহী রংপুর টাউন হল। এটি শুধু একটি অডিটোরিয়াম বা হল নয়
অনেক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক সামাজিক গঠনমূলক কর্মকাণ্ডের সূতিকাগার। রংপুর অঞ্চলের সংস্কৃতি ও মুক্তবুদ্ধি চর্চার
প্রাণ কেন্দ্র এই টাউন হল
থেকেই অনেক ক্ষণজন্মা পুরোধা ব্যক্তিত্ব বাঙালী সংস্কৃতির মুক্ত চিন্তার পথ দেখিয়েছেন। বহু
সামাজিক, রাজনৈতিক সংস্কারের সাক্ষী রংপুর টাউন হল।
রংপুরের
অনেক স্থাপনার সাথে মিশে রয়েছে কাকিনার রাজা মহিমা রঞ্জন
রায়ের নাম। নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা খুব বেশী না থাকলেও তিনি
ছিলেন শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিত্ব। শিক্ষার প্রতি অগাধ ভালবাসা থেকে অনগ্রসর বাঙালিকে সুশিক্ষার আলোয় আলোকিত করার জন্য বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, লাইব্রেরীর জন্য জমি দান করেন তিনি। এখনো রংপুর টাউন হল, কৈলাশরঞ্জন স্কুল, রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী তারি মহিমার গৌরব গাথা স্মরণ করিয়ে দেয়। এই অঞ্চলের নাট্যচর্চা
ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বিকাশের জন্য ১৮৮৫ সালে তৎকালীন রঙ্গপুর নাট্য সমাজ (রংপুর ড্রামাটিক এ্যাসোসিয়েশন বা আর.ডি.এ) একটি রঙ্গ
মঞ্চ বানানোর উদ্যোগ গ্রহণ করে। এক্ষেত্রেও এগিয়ে আসেন কাকিনার রাজা মহিমা রঞ্জন রায়। ১৮৯১ সালে রংপুরের উৎসাহিত নাট্য সমাজকে একটি রঙ্গশালা প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি ১০ বিঘা ৩
কাঠা জমি ইংরেজ সরকারের বরাবরে লিখে দেন। ১৮৯৬ সালে সেক্রেটারি অফ স্টেট ইন্ডিয়ান
কাউন্সিল ও রংপুর নাট্য
সমাজের মধ্যে যে দলিল সম্পাদিত
হয়, সেই দলিল অনুযায়ী রংপুর নাট্য সমাজ তা মালিকানার অধিকারী
হয়।
জমির
মালিকানা লাভের পর প্রথমে এখানে
একটি চালা ঘরে নাট্য চর্চার শুরু হয়। সূচনালগ্নে এর নাম ছিল
"রংপুর নাট্য সমাজ গৃহ"। এই রঙ্গ
মঞ্চে প্রথম নাটক হিসেবে মঞ্চস্থ হয় মধুসূদন দত্তের "শর্মিষ্ঠা"। টাউন হল
ক্যাম্পাসেই রয়েছে অবিভক্ত ভারতের অন্যতম প্রাচীন লাইব্রেরিগুলির একটি রংপুর পাবলিক লাইব্রেরী। যা স্থাপিত হয়েছিল
১৮৫৪ সালে। রংপুর পাবলিক লাইব্রেরীকে কেন্দ্র করেই লাইব্রেরী ভবনের একাংশে প্রতিষ্ঠিত হয় রঙ্গপুর সাহিত্য পরিষদ যা কলকাতার বাইরে
বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের প্রথম শাখা। পাশেই রয়েছে স্থপতি তাজ উদ্দিন চৌধুরীর ডিজাইনে করা আধুনিক স্থাপত্য শৈলীর অপূর্ব নিদর্শন রংপুর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার। ৭০'র দশকের
শেষভাগে এই শহীদ মিনারের
ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রংপুর অঞ্চলে মুক্তিযুদ্ধে প্রথম শহীদ শংকু সমজদারের মা দীপালী সমজদার।
রংপুর
টাউন হল শুধু আনন্দ,
চিত্ত বিনোদন বা রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের
সূতিকাগার নয়। অনেক বেদনা ও কষ্টের মিশে
আছে এর সাথে ।
হলের ইট পাথরের রন্ধ্রে
রন্ধ্রে জড়িয়ে আছে ৭১ এর স্মৃতি
গাথা। বীরাঙ্গনাদের আর্ত চিৎকার, গুমোট চাপা কান্না। পাক হানাদার বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের সময় এই টাউন হলকে
বানিয়েছিল 'নারী নির্যাতন' কেন্দ্র। যুদ্ধের বিভীষিকায় অনেক
মুক্তিকামী মানুষকে এখানে হত্যা করা হয়েছে। আর সেই বিভীষিকাময়
দিনের স্মৃতি ধারণ করে এখনও দাঁড়িয়ে আছে রংপুর টাউন হল।
কিভাবে
যাওয়া যায়:
ঢাকা
থেকে রংপুর যাওয়ার জন্য আগমনী পরিবহন, এস আর, নাবিল।গ্রীন লাইন , টি আর ট্রাভেলস
শ্যামলী, হানিফ, কেয়া ইত্যাদি পরিবহনের বাস চলাচল করে। ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে ছাড়ে এসব বাস।