বোয়ালখালীর
মেধসমুনি আশ্রম উদ্ভাবনী থিমের পুজা
মণ্ডপের জন্য বিখ্যাত নয়। এটি অনন্য এর পুরোনো ইতিহাসের জন্য। আশ্রমটি প্রাকৃতিক
সৌন্দর্যের মাঝে ও শিল্প উন্নয়নের ছোঁয়া
থেকে দূরে গড়ে উঠেছে, যেখানে
দর্শনার্থীরা ভেতরকার শান্তি খুঁজে নেয়ার সুযোগ পায়।
অবস্থানঃ
মেধসমুনি আশ্রম
বোয়ালখালী উপজেলার কড়লডেঙ্গা পাহাড়ে অবস্থিত।
ইতিহাসঃ
কালিক পুরাণ ও
কামাক্ষ্যা পুরাণের কিংবদন্তী মতে, সত্য যুগে রাজা
সুরথ ঋষি মেধসের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পর বসন্তকালে মেধসমুনি আশ্রমে প্রথম দুর্গা পূজা করেছিলেন। স্বামী
বেদানন্দ মহাত্মাই ১৯০০ সালে যোগবলে জ্ঞাত হয়ে এ পুণ্যতীর্থ উদ্ধার করেন। আশ্রম
পুনরুদ্ধারের পর থেকেই মেধসমুনি আশ্রমকে ভক্তদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অন্যতম
তীর্থস্থান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে আশ্রমটি
আবারো ধ্বংস হয়ে যায়। পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী সমগ্র জায়গাটিকে ছাইয়ের স্তূপে
পরিণত করে ও ছয় ফুট লম্বা দেবমূর্তি ধ্বংস করে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই
পবিত্র আশ্রমের যত্ন নেওয়ার মতো কেউ ছিল না। ভক্ত, সাধু ও পণ্ডিতদের সমন্বয়ে আশ্রম কমিটি
পুনর্গঠিত হয়। আশ্রমের পেছনে কমিটির সময় ব্যয় ও সমর্পণের জন্য আশ্রম আবারও তার
অতীত মহিমা পুনরুদ্ধার করেছে।
বর্ণনাঃ
আশ্রমে চণ্ডী
মন্দির, শিব মন্দির,
সীতা মন্দির, তারা কালী মন্দিরসহ ১০টি মন্দির রয়েছে।
আশ্রমের প্রধান ফটক দিয়ে প্রায় আধা কিলোমিটার গেলে ওপরে ওঠার সিঁড়ি। প্রায়
১৪০টি সিঁড়ি ভেঙে ওপরে উঠলে মেধস মুনির মন্দির চোখে পড়বে। এই মন্দিরের পরই দেবী
চণ্ডীর মূল মন্দির অবস্থিত। এর একপাশে রয়েছে সীতার পুকুর, পেছনে রয়েছে ঝরনা। মন্দিরের পেছনে সাধু
সন্ন্যাসী ও পুণ্যার্থীদের থাকার জন্য রয়েছে দোতলা ভবন। প্রায় ৬৯ একর
জায়গাজুড়ে স্থাপিত হয়েছে এই মন্দির। প্রতি বছর মহালয়ার মাধ্যমে দেবী পক্ষের
সূচনা হয় এই মন্দিরে।
আশ্রম গেটের
কিছুটা আগে রাস্তার বামে রয়েছে একটি পদ্মপুকুর, সাথে বিশ্রামাগার। এই এলাকায় বিভিন্ন প্রজাতির
প্রায় ৩০০,০০০ গাছপালার
আবাস, যার মধ্যে রয়েছে মেহগনি,
সেগুন, রেইন ট্রি, শিউলি, হাসনাহেনা, করবী, কৃষ্ণচূড়া, কনকচূড়া, বাঁশগাছ, কলাগাছসহ প্রভৃতি উদ্ভিদ। আশ্রমের লোকেরা কয়েক
দশক ধরে এদের প্রতিপালন করেছে। প্রায় ৫০০ ফুট উঁচু পাহাড়ের চূড়ায় উঠার পর
মনোমুগ্ধকর দৃশ্য উপভোগ করা সম্ভব। পাহাড়ের উপরে সবকিছুই নীরব, কেবল পাখির কূজন ও সরীসৃপদের আবাসস্থলের চারদিকে
আবর্তনের শব্দের পাশাপাশি ভক্তিমূলক ভজন ও পূজার সময় ব্যবহৃত পিতলের ঘণ্টার
টুংটাং শব্দ শোনা যায়। সারি সারি পাহাড়, পাহাড়ের মাঝে জুমচাষ, দূরে মেঘাচ্ছন্ন
আকাশের নিচে ঝাপসা প্রকৃতির দৃশ্য, ঠাণ্ডা হাওয়া-
এসবকিছু উপভোগ করে ভালো লাগার মতো সময় এখানে কাটানো যায়।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
চট্টগ্রাম
বহদ্দরহাট বাস টার্মিনাল হতে বাসযোগে অথবা সিএনজি ট্যাক্সিযোগে সরাসরি বোয়ালখালী
উপজেলা পরিষদ নামতে হবে। এরপর কানুনগোপাড়া কালাইয়ার হাট এর বাম পাশ দিয়ে কিছুদূর
অতিক্রমের পর করলডেঙ্গা পাহাড়ের চুড়ায় মেধসমুনি আশ্রম পেয়ে যাবেন।