শিয়া
আঞ্জুমানে হোসাইনী তথা শিয়া সম্প্রদায়ের কতিপয় মুসলমানগণ ৪৫০ বছর পূর্ব হযরত মুহাম্মদ (স:) এর ২য় প্রোপৌত্র
ইমাম হোসেনের রওজা শরীফ অনুকরণে শিয়া সম্প্রদায়ের আত্মশুদ্ধি ও অনুতপ্ত প্রকাশ
তথা কারবালায় ঘটে যাওয়া পৃথিবীর সবচাইতে নিকৃষ্ট হত্যাকান্ডের ষড়যন্ত্রকারী, প্ররোচনাকারী ও হত্যাকারী জাতি
হিসেবে শিয়া সম্প্রদায় ইমামবাড়া হোসেনী দালান ও তৎসম্পর্কিত উপকরণে
এই দালানটি নির্মাণ করেন। শিয়া আঞ্জুমানে হোসাইনী তথা শিয়া সম্প্রদায় ১৮৯১ ইং সালে মীর
ইয়াকুব ইমামবাড়া স্থাপন করেন। পরবর্তীতে শিয়া সম্প্রদায়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ২০০৪ ইং সালে ইয়াকুব
ইমামবাড়া পুন:সংস্কার করা হয়। এছাড়া গাছপালা বেষ্টিত মনোরম পরিবেশ এবং সেখানকার নিস্তব্ধ নিরবতা মনে প্রশান্তি এনে দেয়। ইমামাবাড়া হোসেনী দালান পুরনো ঢাকার নিমতলী ও চানখাঁরপুল এলাকার
হোসেনী দালান রোডে অবস্থিত। ঠিকানা : ৩০/১ হোসেনী
দালান রোড, লালবাগ,ঢাকা।
পরিদর্শনের সময়সূচী
প্রতিদিন
সকাল ৭.০০ টা
থেকে রাত ১০.০০ টা
পর্যন্ত খোলা থাকে।
টিকেট কাউন্টার
ইমামবাড়া
হোসাইনী দালানে কোন টিকেট কাউন্টার নেই। সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত।
দর্শনীয় স্থাপনা
এখানে
একমাত্র দর্শনীয় জিনিস হিসেবে ইমামবাড়া বা হোসেনী দালানের
কথাই প্রথমে বলতে হয়। ইমাম হোসাইন (রা:) এর রওজা মোবারক
অনুকরণে নির্মিত এই ইমামবাড়া। সকল
মুসলমান শিয়া, সুন্নী তথা নর-নারী, আবাল
বৃদ্ধ সব বয়সের লোক
এখানে আসেন ইমাম হোসাইন (রা:) এর রওজা মোবারক
দেখতে। সকলেই ব্যক্তিগত ভাবে নানা রকম মানত, মাজার নিয়াজ ও আত্মতৃপ্তির জন্য
এখানে আসেন। মহিলা ও পুরুষদের আলাদা
ব্যবস্থা থাকায় এখানে মহিলাদের আনাগোনা চোখে পড়ার মত। সবাই তাদের মানতের টাকা চেরাগী বাক্সে দেয়। এছাড়া ইমামবাড়ায় তিনজন খাদেম আছেন। যারা এ সকল বিষয়ে
আগত দর্শনার্থীদের সাহায্য করে থাকেন।
ইমামবাড়া পুকুর
এখানে
দর্শনীয় আরেকটি জিনিস হল ইমামবাড়া পুকুর।
যা দেখতে খুবই দর্শনীয়। চারদিকে ওয়াল ও ঘাট বাঁধাই
করা এবং পুকুরের নানা মাছ দর্শনার্থী তথা আগতদের নজড় কারে।
ইমামবাড়া কবরস্থান
শিয়া
সম্প্রদায়ের নির্দিষ্ট কিছু কবরস্থানের মধ্যে ইমামবাড়া হোসেনী দালান কবরস্থান অন্যতম। দর্শনীয় স্থান না হলেও সবাই
এখানে আসেন, কবর জিয়ারত করেন। বর্তমানেও এখানে নতুনভাবে কবর দেয়া হয়। অবশ্য সেটা ইমামবাড়া শিয়া আঞ্জুমানে হোসাইনীদের জন্য।
গাম্বে শাইদা
ও
নাজার
নিয়াজ
ইমামবাড়া
হোসেনী দালানে মূল ফটকের পার্শ্বে যে মূল ভবনটি
সেটি গাম্বে শাইদা। মহররমের ৭, ৮, ৯
ও ১০ই তারিখে এই গাম্বে শাইদা
খোলা হয় এখানে। মূল
মিছিল ও শিয়াদের গাওরা
ও নিশান সহ আরও প্রয়োজনীয়
উপকরণগুলো রক্ষিত আছে।
এছাড়া
মূল ভবন/দালানের নিচের স্থানটি নাজার নিয়াজ ও নানারকম মানত
উপলক্ষ্যে মোমবাতি, আগরবাতি জ্বালিয়ে এবং নানা রকম নিয়াত বাধা হয়।
মাতম ঘর
ইমামবাড়া
মূল ভবনটির দ্বিতীয় তলায় মাতম ঘর আছে যেখানে
মহররমের সময় মাতম করা হয়।
নামাজের স্থান
মহিলাদের
জন্য আলাদাভাবে হোসেনী দালানে নামাজ ও কোরআন পড়ার
ব্যবস্থা আছে।
অযুখানা এবং
টয়লেট
ইমামবাড়ায়
মহিলা ও পুরুষদের জন্য
আলাদাভাবে অযুখানা ও টয়লেট উপরে
এবং নিচে ব্যবস্থা আছে।
জুতা রাখার
ব্যবস্থা
বিশেষ
করে মহররমের সময় হোসেনী দালানের সামনের প্রবেশ পথে জুতা রাখার ব্যবস্থা করা হয়। ব্যক্তিগত ভাবে স্থানীয় অধিবাসী তথা হোসেনী দালান ম্যানেজমেন্ট কমিটির লোক এ সময় এই
ভ্রাম্যমান ব্যবস্থা করে থাকেন। প্রতি জোড়া জুতা ৫.০০ টাকা।
এর জন্য অবশ্য নাম্বার টোকেন নিতে হয়। এছাড়া বাকি সময় জুতা নিজ নিজ দায়িত্বে দালানের ভেতরে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা যায়।
তত্ত্বাবধানকারী কর্তৃপক্ষ
ঢাকা
সিটি কর্পোরেশন ও জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট
এবং হোসেনী দালান পঞ্চায়েত কমিটি ইমামবাড়া ম্যানেজমেন্ট কমিটি এবং শিয়া আঞ্জুমানে হোসাইনী এর সার্বিক তত্ত্বাবধানে
আছেন।
অগ্নি নির্বাপন
ও
নিরাপত্তা
ব্যবস্থা
ইমামবাড়া
অগ্নি নির্বাপণের জন্য Fire Exit ও Fire Extinguisher লাগানো আছে। এছাড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা আশানুরূপ ভালো। এছাড়া ধোয়মোছা, ঝাড়ু ও অন্যান্য কাজের
জন্য এখানে সরকারি ভাবে লোক আছে। এছাড়াও তিনজন অস্ত্রধারী কনষ্টেবল নিরাপত্তা কাজে নিয়োজিত থাকেন।
বই বিক্রয়
কেন্দ্র
এখানে
দুটো বই বিক্রয় কেন্দ্র
রয়েছে। কুরআন ভিত্তিক গবেষণা ও প্রচার কেন্দ্র।
দারুল কুরআন ফাউন্ডেশন হোসাইনী দালান ইমামবাড়া ঢাকা। দারুল কুরআন ইসলামী শিক্ষা প্রদর্শনী কেন্দ্র ও দারুস সাকালাইন
সেলস সেন্টার বই বিক্রয় কেন্দ্র।
মাদ্রাসা ও
ফুড
কর্ণার
এখানে
মাদ্রাসা-ই-আব্বাসিয়া নামে
একটি মাদ্রাসা রয়েছে। ভেতরে কোন ফুড কর্ণার নেই। বাইরে ভ্রাম্যমান দোকান ও স্থানীয় খাবার
হোটেল আছে। ইমামবাড়ার বিপরীত পাশে একটি মসজিদ আছে।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
সিএনজি,
রিকশা বা টেম্পোযোগে চাখাঁরপুল
যাওয়া যায়।