বাংলাদেশের
সর্ববৃহৎ ঈদুল ফিতরের জামাত এ ময়দানেই অনুষ্ঠিত
হয়। দু' থেকে আড়াই লাখ মুসলি্ল এক সাথে এখানে
ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করেন। গত ঈদুল ফিতরে
প্রায় ৩ লাখ মুসলি্ল
এক সাথে এ মাঠে নামাজ
আদায় করেছেন। এ জামাতের প্রতি
মুসলি্লদের আকর্ষণ ও বিশ্বাস ক্রমেই
বাড়ছে। ফলে প্রতি বছরই এ মাঠের কলেবর
বৃদ্ধি পাচ্ছে। নামাজীর সংখ্যা বাড়ছে। ছড়িয়ে পড়ছে মাঠের সুনাম। শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান আকর্ষণীয় ও বিশাল জামাত,
গৌরবময় ও ঐতিহ্যশালী করেছে
কিশোরগঞ্জকে।
বহু
দুর-দুরান্ত থেকে এমনকি দেশের সীমানা পেরিয়ে বিদেশ থেকে মুসলি্লর আগমন এ মাঠের মর্যাদাকে
বাড়িয়ে তুলেছে। বহু পর্যটক এই অভূতপূর্ব মহামিলনের
দিনক্ষণটি দেখার জন্যও উপস্থিত হচ্ছেন। কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের পূর্ব প্রান্তে মনোরম পরিবেশে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানের অবস্থান। এই মাঠের দক্ষিণ
পাশর্্ব দিয়ে নরসুন্দা নদী পূর্ব-পশ্চিমে চলে গেছে। বর্তমানে ঈদগাহটির চারিদিক অনুচ্চ প্রাচীরে ঘেরা। এক তথ্যে জানা
যায়, এর মূল মাঠে
২৬৫ টি কাতার হয়।
প্রতি কাতারে নামাজীর সংখ্যা হয় ৬ থেকে
৭ শত। সেই হিসেব অনুযায়ী নামাজীর সংখ্যা দাঁড়ায় ১ লাখ ৮৫
হাজার ৫ শত। ঈদের
জামাতে মুসলি্ল মাঠে উপচে চারপাশের খালি জায়গা জমি ক্ষেত, বসত বাড়ির আঙ্গিনা ভরে যায়। জানা গেছে, ইতিহাস প্রসিদ্ধ এই ঈদগাহের জমির
পরিমান ৬.৬১ একর।
এর পশ্চিম সীমারেখা উত্তর দক্ষিনে ৩৩৫ ফুট এবং পূর্ব সীমারেখা উত্তর দক্ষিনে ৩৪১ ফুট এবং উত্তর সীমারেখা পূর্ব পশ্চিমে ৭৮৮ ফুট ও দক্ষিন সীমারেখা
পূর্ব পশ্চিমে ৯৪১ ফুট দৈঘর্্য।
কিশোরগঞ্জের
এই ঐতিহ্যবাহী ঈদগাহের সৃষ্টির ইতিহাস সমঙ্র্কে অনেক জনশ্রুতি আজও প্রচলিত রয়েছে। জানা যায়, ১৮২৮ সালে এই মাঠের গোড়াপত্তন
হয। ওই বছরই স্থানীয়
সাহেব বাড়ির সৈয়দ আহম্মদ (র.) এর তালুক সমঙ্ত্তিতে
তারই ইমামতিতে ঈদের প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয়। পরবতর্ীতে স্থানীয় হয়বতনগর দেওয়ান পরিবারের অন্যতম দেওয়ান মান্নান দাদ খানের বদান্যতায় এ মাঠের কলেবর
বৃদ্ধি পায় এবং এবং এর পরিধি বিস্তৃতি
লাভ করে। দেওয়ান মান্নান দাদ খান ছিলেন বীর ঈশা খাঁর অধঃস্তন বংশধর।
এ
প্রসিদ্ধ ঈদগাহের ময়দানের নামকরনের বিষয়ে জনশ্রুতি হচ্ছে, দীর্ঘকাল পূর্বে একবার এই মাঠে ঈদের
জামাতে মুসলি্লর সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল ১ লাখ ২৫
হাজার অর্থাৎ সোয়া লাখ। এই সোয়া লাখ
থেকেই শোলাকিয়ার নামকরন হয়েছে। অপর একটি ধারনা হচ্ছে, মোঘল আমলে এখানে পরগনার রাজস্ব আদায়ের একটি অফিস ছিল। সেই অফিসের অধীনে পরগনার রাজস্বের পরিমান ছিল সোয়া লাখ টাকা। জনশ্রুতি হচ্ছে এটাও শোলাকিয়া নামের উৎস হতে পারে।
ঈদুল
ফিতরের সময় ঈদগাহ ও এর আশপাশ
এক ভিন্ন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। মূল শহর থেকে ঈদগাহ মাঠ পর্যন্ত প্রায় এক কিলোমিটার রাস্তায়
মানুষের ঢল নামে। রাস্তার
দু'পাশে দাঁড়িয়ে থাকে ভিক্ষুক ও বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসার লোকজন চাঁদা আদায়ের জন্য। সে সময় শহরের
বিভিন্ন হোটেলে বাড়তি লোকের চাপ পড়ে এবং আত্দীয় স্বজনের বাড়িতেও লোকের ভিড় হয়। ঈদের জামাতকে কেন্দ্র করে ঈদগাহের পাশে মেলা বসে। এ মেলায় সুন্নতি
লাঠি, তসবিহ, টুপি, রেহাল, সুরমা, জলচৌকি, পিঁড়িসহ বিভিন্ন কাঠের খেলনা ও কুটির শিল্পজাত
দ্রব্যাদি ইত্যাদি পাওয়া যায়। নামাজ শেষে মুসলি্লরা এখান থেকে বিভিন্ন জিনিস ক্রয় করে বাড়ি ফেরেন।
জানা
যায়, তৎকালীন পাকিস্তান আমল ও ব্রিটিশ শাসনামলে
এ মাঠে সুদূর আসাম ও কুচবিহার থেকে
অসংখ্য ধর্মপ্রাণ মুসলি্ল ঈদের নামাজ পড়তে এখানে আগমন করতেন। পবিত্র ঈদের এই জামাতে এখনো
জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের অসংখ্য মুসলি্লর সাথে দেশের অন্যান্য অঞ্চলের হাজারো মুসলমান অংশ গ্রহন করেন। এখানে বৃহত্তর ময়মনসিংহের জেলাগুলো ছাড়াও সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, সিলেট, নরসিংদী, ঈশ্বরদীসহ কয়েকটি জেলা থেকে অনেক মুসলি্ল নামাজ আদায় করতে আসেন। পাকিস্তান আমলে থেকেই এ মাঠে দুর
দুরান্ত থেকে লোক আসার জন্য বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা রাখা হয়।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
ঢাকা
থেকে সকালে এবং সন্ধ্যায় এগারসিন্দুর আন্তঃনগর ট্রেনে কিশোরগঞ্জ পৌঁছে মাত্র ১৫/২০ টাকার
রিকশা ভাড়ায় শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে পৌঁছা যায়। ট্রেনের ভাড়া প্রথম শ্রেণির চেয়ার ২০০/- টাকা, সুভন চেয়ার ১৫০/- টাকা এবং সুভন ১২০/- টাকা। এছাড়াও সায়েদাবাদ বাস স্ট্যান্ড থেকে নন-এসি অন্যন্যা
সুপার, যাতায়াত, ঈশা খাঁ বাস সার্ভিস ভাড়া ২২০/- টাকা এবং এসি যাতায়াত বাস ভাড়া ৪০০/- এবং মহাখালী বাস স্ট্যান্ড থেকে নন-এসি অন্যন্যা,
অন্যন্যা ক্লাসিক বাস ভাড়া ২২০/- টাকা। বিভিন্ন জেলা থেকে মুসল্লিরা রিজার্ভ বাস নিয়ে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ময়দানে জড়ো হয়। নামাজ শেষে তারা বাসে করেই চলে যান।