সংক্ষিপ্ত
বর্ণনা:
নগর
পুলিশের ফারসি প্রতিশব্দ ‘কোতওয়াল’ এর অনুকরণে নামকরণ
করা হয়েছে। এ নগরপুলিশ (কোতওয়াল)
গৌড় নগরীর দক্ষিণ দেয়াল রক্ষা করার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। বর্তমানে এটি প্রায় ধ্বংসপ্রাপ্ত। আবিদ আলীর বর্ণনানুযায়ী (Memoirs of
Gaur and Pandua, Calcutta, 1931), প্রবেশপথের
মধ্যবর্তী খিলানের উচ্চতা ৯.১৫ মিটার
এবং প্রস্থ ৫.১০ মিটার।
তার বিবরণে প্রবেশপথের পূর্ব ও পশ্চিমদিকের সচ্ছিদ্র
প্রাচীরের কথা উল্লেখ আছে। এ ছিদ্রগুলি দিয়ে
শত্রুর ওপর গুলি বা তীর ছোড়া
হতো। আবিদ আলীর মতে, অভ্যন্তর ও বহির্ভাগ উভয়
পার্শ্বের সম্মুখভাগে ক্রমঢাল বিশিষ্ট অর্ধবৃত্তাকার বুরুজ ছিল। বর্তমানে সারিবদ্ধ খরছিদ্র সম্বলিত বিশাল উত্তল পরিলেখসহ বহিস্থ বরুজের আংশিক দেখা যায়। বুরুজগুলির পার্শ্বের প্রতিরক্ষা প্রাচীর এখনও বিদ্যমান এবং তা পূর্ব ও
পশ্চিম দিকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। পশ্চিম প্রাচীরটি নদী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়েছে, আর পূর্ব প্রাচীরটি
ভারতীয় সীমান্তের অভ্যন্তরে কিছুদুর গিয়ে পৌছেছে। এরপর এ প্রাচীর বাংলাদেশের
মধ্য দিয়ে উত্তরমুখী হয়ে পুনরায় ভারতে প্রবেশ করেছে। পুরু মাটির দেয়াল দেখেই বোঝা যায়, নগরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তখন কত মজবুত ছিল।
প্রবেশপথের খিলানগুলোর ভেতর ও বাহিরে উভয়
পার্শ্বই কারুকার্যমন্ডিত প্যানেলে শোভিত এবং এ প্যানেলের অভ্যন্তরে
আছে ঝুলন্ত মোটিফ। এসব প্যানেলের কিছু কিছু এখনও টিকে আছে।
প্রাচীন
গৌড়ের রাজধানীতে প্রবেশ করতে হলে দক্ষিণ ‘নগর উপকন্ঠে’র অধিবাসীদের এই
তোরণ অতিক্রম করতে হতো। নগরদূর্গের অধিবাসীগণের দক্ষিণমুখী পথও ছিল এটিই। এর উপরের খিলান
বহুদিন আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। এই তোরণটির উচ্চতা
৩১২ ফুট বিস্তার ১৬ ফুট। প্রবেশপথের
দৈর্ঘ্য ১৭ ফুট ৪
ইঞ্চি। জেনারেল ক্যানিংহাম লিখেছেন ‘‘ইহা প্রাচীন মুসলিম স্থাপত্য কীর্তির অন্যতম নিদর্শন।’’ সুলতান আলাউদ্দীন খিলজীর সমসাময়িক স্থাপত্য নিদর্শন বলে তিনি অনুমান করেছেন। তিনি আরো অনুমান করেছেন যে, সুলতান আলাউদ্দিন খিলজীর মৃত্যুর পর লখনৌতিতে দিল্লীর
আধিপত্য কায়েম হলে এই সুদৃশ্য নগর
বেষ্টণী প্রাচীর ও তোরণটি নির্মিত
হয়।’’ এ মত মেনে
নিলে ১২২৯ (হিজরী ৬২৭) খ্রিস্টাব্দের কিছু পর এটি নির্মিত
হয়েছিল বলতে হয়। ডাঃ দানী বলেছেন, ‘‘বঙ্গের সুলতান নাসিরউদ্দিন মহম্মদ শাহের আমলে (পান্ডুয়া হতে গৌড় রাজধানী স্থানান্তরিত হওয়ার পর) রাজধানীর নগর দ্বার হিসাবে ইহা নির্মিত হয়।’’ এই তোরণের উভয়
পার্শ্বে ৬ ফুট বিশিষ্ট
বৃত্তাকার দুটি শান্ত্রী ঘর ছিল। সেখানে
আগ্নেয়াস্ত্রসহ পাহারারত শান্ত্রী থাকতো। এই তোরণ ও
শান্ত্রীঘর দুটিতে বিভিন্ন প্রকার লতাপাতার কারুকার্য ছিল।
কিভাবে
যাওয়া যায়:
চাঁপাইনবাবগঞ্জ
থেকে প্রায় ৩৫ কি.মি.। বাস অথবা
সিএনজি-তে যাওয়া যায়।
প্রায় ৪৫ মি. থেকে
১ ঘন্টা সময় লাগে।