Birth place of poet Rajni Kant Sen and legendary heroine of the shadow picture, Suchitra Sen কবি রজনী কান্ত সেন এবং ছায়া ছবির কিংবদন্তী নায়িকা সূচিত্রা সেনের জন্ম স্থান সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রাম

Birth place of poet Rajni Kant Sen and legendary heroine of the shadow picture, Suchitra Sen কবি রজনী কান্ত সেন এবং ছায়া ছবির কিংবদন্তী নায়িকা সূচিত্রা সেনের জন্ম স্থান সেন ভাঙ্গাবাড়ী গ্রাম



রজনীকান্ত সেন (২৬ জুলাই, ১৮৬৫ - ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০) প্রখ্যাত কবি, গীতিকার এবং সুরকার হিসেবে বাঙালি শিক্ষা-সংস্কৃতিতে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন।
পিতা গুরুপ্রসাদ সেন ও মাতা মনোমোহিনী দেবীর ৩য় সন্তান ছিলেন রজনীকান্ত।
রজনীকান্ত বোয়ালীয়া জিলা স্কুলে (বর্তমান রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল) ভর্তি হন। ১৮৮৩ সালে কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে ২য় বিভাগে এন্ট্রান্স পাস করেন। এরফলে তিনি প্রতিমাসে দশ রূপি বৃত্তি পেতেন। পরবর্তীতে ১৮৮৫ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ২য় বিভাগে এফ.এ পাশ করে সিটি কলেজে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৮৮৯ সালে বি.এ পাশ করে করেন। অতঃপর একই কলেজ থেকে ১৮৯১ সালে পরিবারকে সহায়তা করার জন্য আইন বিষয়ে বি.এল ডিগ্রী অর্জন করেন রজনীকান্ত সেন।
তিনি হিরন্ময়ী দেবী নাম্নী এক বিদূষী নারীকে ১৮৮৩ সালে (৪ঠা জ্যৈষ্ঠ, ১২৯০ বঙ্গাব্দ) বিবাহ করেন। হিরন্ময়ী দেবী রজনী'র লেখা কবিতাগুলো নিয়ে আলোচনা করতেন। কখনো কখনো তাঁর কবিতারবিষয়বস্তু সম্পর্কে মতামত ও সমালোচনা ব্যক্ত করতেন। তাঁদের সংসারে পাঁচ পুত্র - শচীন্দ্র", "জ্ঞানেন্দ্র", "ভুপেন্দ্র, "ক্ষিতীন্দ্র" ও শৈলেন্দ্র এবং চার কন্যা - শতদলবাসিনীশান্তিবালা, "প্রীতিলতা" ও "তৃপ্তিবালা" ছিল। 
রাজশাহী থেকে প্রচারিত উৎসাহ মাসিক পত্রিকায় রজনীকান্তের রচনা প্রকাশিত হতো। তাঁর কবিতা ও গানের বিষয়বস্তু মূখ্যতঃ দেশপ্রীতি ও ভক্তিমূলক। হাস্যরস-প্রধান গানের সংখ্যাও নেহায়েত কম নয়। জীবিত থাকাকালে তিনটি গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। সেগুলো হলো -
  • বাণী (১৯০২)
  • কল্যাণী (১৯০৫)
  • অমৃত (১৯১০)
এছাড়াও ৫টি বই তাঁর মৃত্যু-পরবর্তীকালে প্রকাশিত হয়েছিল।
সেগুলো হচ্ছে -
  • অভয়া (১৯১০)
  • আনন্দময়ী (১৯১০)
  • বিশ্রাম (১৯১০)
  • সদ্ভাবকুসুম (১৯১৩)
  • শেষদান (১৯১৬)
তন্মধ্যে - বাণী এবং কল্যাণী গ্রন্থটি ছিল তাঁর গানের সঙ্কলন বিশেষ। তিনি কান্ত কবি নামেও পরিচিত। অমৃত কাব্যসহ দু'টি গ্রন্থে বর্ণিত রয়েছে শিশুদের পাঠ্য উপযোগী নীতিবোধ সম্পর্কীয় ক্ষুদ্র কবিতা বা ছড়া। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কণিকা কাব্যগ্রন্থটিই তাকে অমৃত কাব্যগ্রন্থ রচনা করতে ব্যাপক প্রভাবান্বিত করেছে।
১৯০৯ সালে রজনীকান্ত কণ্ঠনালীর প্রদাহজনিত কারণে সমস্যা ভোগ করতে থাকেন। আর্থিক সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করা সত্ত্বেও একই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর তারিখে তাঁকে জোরপূর্বক কলকাতায় প্রেরণ করেন পরিবারের সদস্যরা। একজন ব্রিটিশ ডাক্তার তাঁকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন ও তাঁর ল্যারিঙ্কস্‌ ক্যানসার হয়েছে বলে সনাক্ত করেন। অতঃপর তিনি কলকাতার বিভিন্ন প্রথিতযশা ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। কিন্তু তাঁর অবস্থার আর উত্তরণ হয়নি, বরঞ্চ উত্তরোত্তর অবনতি হতে থাকে।
রজনীকান্তের শেষ দিনগুলো ছিল অসম্ভব ব্যথায় পরিপূর্ণ। তিনি ১৩ সেপ্টেম্বর, ১৯১০ সালে (১৩১৭ বঙ্গাব্দের ২৮শে ভাদ্র) মঙ্গলবার রাত্রি সাড়ে আট ঘটিকার সময় লোকান্তরিত হন।

কান্ত কবি রজনী কান্ত সেনের একটি কবিতা

"বাবুই পাখিরে ডাকি, বলিছে চড়াই,
কুঁড়ে ঘরে থাকি কর শিল্পের বড়াই,
আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে
তুমি কত কষ্ট পাও রোদ, বৃষ্টি, ঝড়ে।
বাবুই হাসিয়া কহে, "সন্দেহ কি তায়?
কষ্ট পাই, তবু থাকি নিজের বাসায়।
পাকা হোক, তবু ভাই, পরের ও বাসা,
নিজ হাতে গড়া মোর কাঁচা ঘর, খাসা।"
ছোট বেলায় কবি রাজশাহীর সোনা দিঘির মোড়ে অবস্থিত বোয়ালিয়া জেলা স্কুলে ভর্তি হন (বর্তমানে যেটা রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুল)। গাছ থেকে ফল চুরি করে সহপাঠিদের মধ্যে বিলিয়ে দিতেন এবং পাখির বাসা ভেঙে শাবক নিয়ে খেলা করতে ভাল বাসতেন। গাছ থেকে পরে কয়েক বার তার হাত ভেঙে গিয়ে ছিল। বই একবার পরলেই মুখস্ত হয়ে যেত। তিনি কখনও বেশী পড়তেন না। পরীক্ষার কয়েক দিন আগে সামান্য পড়েই প্রতিভার স্বাক্ষর রাখতেন। তিনি ১৮৮৩ সালে কুচবিহার জেনকিন্স স্কুল থেকে দ্বিতীয় বিভাগে এন্ট্রাস পাস করে ১০ টাকার সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। এসময় রাজশাহী বিভাগীয় স্কুলের প্রতিযোগিতায় ইংরেজি প্রবন্ধ লিখে মাসিক ৫ টাকা হারে প্রমথনাথ বৃত্তি লাভ করেন। তিনি রাজশাহী কলেজ থেকে এফএ ডিগ্রী লাভ করেন। ১৮৯১ সালে বিএল পাশ করে রাজশাহী আদালতে আইন ব্যবসা শুরু করেন। কিছুদিন নাটোর ও নওগাঁয় অস্থায়ী মুনসেফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

দুঃখের বিষয়টি হলো মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে কান্ত কবি রজনী কান্ত মারা যান। ১৩১৬ বাংলা সালে তার মুখে ঘা দেখা দেয়। ক্রমেই তার স্বরভঙ্গ হতে থাকে। ওষুধে কাজ হয়না। রোগ বৃদ্ধি পেতে থাকে। একই বসর ২৬ ভাদ্র তিনি পরিবার বর্গের সাথে কলকাতায় যাত্রা করেন। ভাঙাবাড়ীর জন্ম ভুমি থেকে এটি তার চির বিদায়। কলকাতায় গিয়ে গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। গলায় অস্ত্রোপচার করা হয়। চিরদিনের জন্য বন্ধ হযে যায় তার বাক শক্তি। এ যাত্রায় রক্ষা পেলেও বেশি দিন বেঁচে ছিলেন না তিনি। মাত্র ৭ মাস জীবিত ছিলেন। পুনরায় অসুখ বাড়তে থাকে। শত চেষ্টা করেও ফল পাওয়া যায়নি। ১৯১০ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর তিনি পরলোক গমন করেন। আর উপমহাদেশের বাংলা ছায়াছবির কিংবদন্তির নায়িকা সুচিত্রা সেন এই ভাঙাবাড়ির কান্ত কবির বাড়িতেই জন্ম গ্রহন করেন। সুচিত্রা সেনের প্রাইমারি শিক্ষা এখানেই চলেছে। কবি রজনীকান্ত সেন তার নানা।

প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ বা সরকারী ভাবে কোন সহযোগিতা না থাকায় আজ কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে কান্ত কবি রজনী কান্ত সেনের পৈতিক বাড়িটি।

কিভাবে যাওয়া যায়:

ঢাকা থেকে উত্তরবঙ্গগামী যেকোন বাসে চড়ে সিরাজগঞ্জের কড্ডার মোড় বাস স্ট্যান্ডে নামতে হবে অথবা রেলযোগে ঢাকার যেকোন স্টেশন হতে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী রেলওয়ে স্টেশনে নামতে হবে। উক্ত বাস স্ট্যান্ড/রেলস্টেশন হতে বাস/সিএনজি যোগে বেলকুচি উপজেলার চালা বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিক্সা/ভ্যানগাড়ী/সিএনজি যোগে প্রায় ১.৫(দেড়) কিলোমিটার দূরের সেন ভাংগাবাড়ী বাজার নামতে হবে। বাজার হতে মাত্র ২ মিনিটের পথ কাঠের ব্রিজ পার হয়েই কবি রজনী কান্ত সেনের বসতবাড়ী পাওয়া যাবে।

Post a Comment

Previous Post Next Post