নড়াইলের কালিয়া
উপজেলার পানিপাড়া গ্রামে গড়ে উঠেছে অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় একটি ইকো পার্ক।
অরুণিমা কান্ট্রি সাইড তার নাম। এখানে গাছের ছায়ায়, পাখির গান শুনতে শুনতে, জলের ধারে অনায়াসে কাটিয়ে দেয়া যায় অনেকটা সময়।
আবহমান গ্রামবাংলার চিরচেনা রূপ আর আধুনিকতার সুপরিকল্পিত সমন্বয় ঘটানো হয়েছে
এখানে। ব্যস্ত শহুরে জীবনের বাইরে এসে বুক ভরে একটু নিঃশ্বাস নেয়ার এমন সুযোগ এ
দেশে খুব বেশি নেই। ইচ্ছা থাকলে এ দেশের অবহেলিত পাড়া-গায়েও সৃষ্টি করা যায় মনের
মাধুরী মেশানো কোনো স্বপ্নপুরি।
গ্রামের নাম
পানিপাড়া। অন্ধকার গ্রাম। নড়াইল জেলার কালিয়া উপজেলার পিছিয়ে পড়া গ্রাম। পল্লী
বিদ্যুৎ আছে ঠিকই কিন্তু প্রায় সময় গ্রাম
অন্ধকারে ডুবে থাকে। ঝিঝি ডাকে। হুক্কা হুয়া করে ছুটে যায় চতুর শিয়াল। পিচ ঢালা পথ,
ইট বিছানো পথ, কাচা মেঠো
পথ ছুরির মতো একেবেকে এক পর্যায়ে বিলের কোলে হারিয়েছে। নড়াইল সদর থেকে
প্রায় ৫০ কিলোমিটার সবুজে আচ্ছাদিত ওই পথ পাড়ি দিয়ে কালিয়া উপজেলার পানিপাড়া
গ্রাম। বাংলাদেশের হাজার গ্রামের মতোই সাধারণ একটি গ্রাম। কিন্তু পানিপাড়া গ্রাম এ
দেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে নিজেই ইতিহাস হয়েছে। অন্ধকার হটিয়ে দিয়ে আলোর
ঝরনায় স্থান করে ফর্সা হয়েছে। হারিয়ে যাওয়া সম্পদ বুকে আগলে রেখে ভেতরে ভেতরে
সমৃদ্ধ ছিল পানিপাড়া। এ গ্রাম এখন ভিন্ন পৃথিবী। এ পৃথিবীর নাম অরুণিমা কান্ট্রি
সাইড। গ্রামের মেধাবী সৃজনশীল ব্যক্তি খবিরউদ্দিন আহমেদ ওই কান্ট্রি সাইডের
স্বপ্নের বীজ বপন করেছেন। যে বীজের বৃক্ষ আজ পল্লবিত, পুষ্পিত, শোভিত। যে শোভা পানিপাড়া গ্রাম ছাপিয়ে দশ
গ্রামের চৌহদ্দি ডিঙিয়ে এখন বাংলাদেশকেও শোভিত করার জন্য ডাকছে। পানিপাড়া তার সবুজ
দরজা খুলে দিয়ে প্রকৃতিপ্রেমীদের তার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছে। এ
ডাকে সাড়া দিয়ে রঙ-বেরঙের পাখি উড়ে এসে কান্ট্রি সাইডের ঝাউ বৃক্ষের ডালে এসে
বসছে। হারিয়ে যাওয়া জীবজন্তুও খুজে নিচ্ছে ঠিকানা।
অরুণিমা কান্ট্রি
সাইড একদিকে ইকো পার্ক, একদিকে এটি একটি
মাছের খামার আবার এটিকে ফুল-ফলের বিরাট বাগানও বলা যেতে পারে। সুনিপুণভাবে দীর্ঘ
এক যুগের বেশি সময়ে শিল্পীর মতোই অরুণিমাকে সাজানো হয়েছে। মধুমতি আর নবগঙ্গা নদীর
সঙ্গমস্থলের ১৫০ বিঘা জমির দ্বীপে ১৯টি দীঘি কেটে বিল ভরাট করে ফুল-ফলের হাজার
হাজার চারা রোপণ করে অরুণিমাকে তিলোত্তমা করে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টিপ পরানো
হয়েছে। মেহগনি, ঝাউ, আম, গোলাপ বাগান ছাড়াও প্রায় দেড় হাজার প্রজাতির বৃক্ষ এখানে রয়েছে। হারিয়ে যাওয়া
অনেক পাখির বাসা বৃক্ষের ডালে খুজে পাওয়া যায়।
দীঘিগুলোতে সাতার
কাটছে দেশি প্রজাতির মাছ। তার পাড়ে আম্রপালির সুনিপুণ বাগান। দীঘি এবং আম গাছ থেকে
আয় হচ্ছে লাখ লাখ টাকা। আবার পর্যটকদের প্লেটে তুলে দেয়া হচ্ছে টাটকা মাছ, সবজি, ফল। গরু, ঘোড়া, কুকুর, হাস-মুরগি, জীবজন্তু,
পশুপাখি, সাপ-ব্যাঙ ইকো পার্কের জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণ
করে অতীতকে ফিরিয়ে এনেছে।
পর্যটকদের জন্য
সব রকম আনন্দ-বিনোদনের আয়োজন ছাড়া এখানে রয়েছে দীঘির মাঝখানে একটি আধুনিক
রেস্টুরেন্ট। থাকার জন্য রয়েছে সব ধরনের আধুনিক সুবিধাসহ কটেজ, গ্রামীণ বাড়ি, ভাসমান কটেজ। নৌকার ওপর নির্মাণ করা দুই কক্ষের
কটেজে রয়েছে লাল কার্পেট, এসি, ফ্রিজ। বনভোজনের ৩০টি অরণ্য স্পট, ছোট ও বড়দের নানা রকম খেলার ব্যবস্থা ছাড়াও
লাইব্রেরি, বিশ্রাম ঘর,
দীর্ঘ ঝুলন্ত সেতু,
স্পিড বোট, নৌকা, ঘোড়ার গাড়ি, পাহারাদার কুকুর,
পদ্ম পুকুর, পদ্ম পুকুরের নীল পদ্ম, নয়নাভিরাম নার্সারি, নার্সারির দেশি-বিদেশি গাছ নিয়ে অরুণিমা
কান্ট্রি সাইড সত্যিকারের পৃথক এক কান্ট্রি হিসেবে গড়ে উঠেছে।
মধুমতি-নবগঙ্গার
সঙ্গম দ্বীপের জোয়ার-ভাটায় সাতার, নৌকা ভ্রমণের
ব্যবস্থার পাশাপাশি অরুণিমায় চাদের আলোয় দীঘির জলে ফুলের অরণ্যে হারিয়ে যাওয়ার
ব্যবস্থাও আছে। অরুণিমা কান্ট্রি সাইডের এমডি ইরফান আহমেদ বলেন, গ্রামের মৎস্যজীবী, কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে তাদের এর সঙ্গে যুক্ত
করে আমরা দেশে ভিন্ন আঙ্গিকের একটি অ্যাগ্রো বেসড টুরিস্ট প্লেস গড়ে তোলার চেষ্টা
করছি। এখানে দেশি-বিদেশি পর্যটকরা আসবেন। তারা বাংলাদেশের ভেতরে প্রকৃত বাংলাদেশকে
দেখতে পাবেন - এমন স্বপ্ন নিয়ে আমরা সম্মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
কয়েকভাবে যাওয়া
যেতে পারেঃ ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক ধরে দীঘলিয়া-গোপালগঞ্জ হয়ে কান্ট্রি সাইড, মোল্লারহাট-চুনখোলা হয়ে কান্ট্রি সাইড।
খুলনা-কালিয়া-বড়দিয়া হয়ে কান্ট্রি সাইড। যশোর-নড়াইল-কালিয়া হয়ে পানিপাড়া কান্ট্রি
সাইড।