Laldighi Chittagong লালদিঘি চট্টগ্রাম
লালদিঘি চট্টগ্রামের একটি ঐতিহাসিক স্থান।
অবস্থানঃ
লালদিঘি
চট্টগ্রাম শহরের মাঝখানে কোতয়ালী থানায় অবস্থিত।
ইতিহাসঃ
১৭৬১ সালে ইস্ট
ইন্ডিয়া কোম্পানি চট্টগ্রামের শাসনভার লাভ করে। সেই সময় এন্তেকালী কাছারি অর্থাৎ
জমি সংক্রান্ত তহসিল অফিসে (বর্তমানে মেট্রোপলিটন পুলিশ অফিস) লাল রঙ দেয়া
হয়েছিল। এটিকে লোকজন তাই “লালকুঠি” বলে চিনত। ব্রিটিশ সরকার লালকুঠির উত্তরপূর্ব
দিকে একটি কারাগার নির্মাণ করেছিল। এটিকেও লাল রঙ করা হয়েছিল এবং তাই এটি “লালঘর”
নামে পরিচিতি লাভ করে। এই ভবন দুটো লাল পাগড়ী পরিহিত ব্রিটিশ পাহাড়াদারেরা
পাহাড়া দিত। অনেকেই মনে করেন এ কারনেই ভবনগুলোর নাম লালকুঠি ও লালঘর। লালকুঠি ও
লালঘরের পাশে একটা ছোট পুকুর ছিলো। চট্টগ্রামে ইংরেজ শাসনের সূচনালগ্নে পুকুরটিকে
বড় করে দিঘিতে পরিণত করা হয়। পুকুরটি লালকুঠি ও লালঘরের মধ্যখানে অবস্থিত হওয়ায়
স্থানীয় জনসাধারণের কাছে লালদিঘি নামে পরিচিত হয়। লালদিঘির চারপাশে পরবর্তীকালে
কতিপয় স্থাপনা, মাঠ নির্মিত হয়।
এ দিঘির পাড়ে মেলাও বসে।
লালদিঘির রিকেট
ঘাট :
লালদিঘির পশ্চিম
পাড়ে রিকেট ঘাট নামে পাকা ঘাট ছিল। তৎকালীন ব্রিটিশ আমলে চট্টগ্রামের কমিশনার
স্যার হেনরী রিকেটস (১৮৪১-৪৮)-এর স্মৃতি রক্ষার্থে চট্টগ্রামের তৎকালীন জমিদারগণ এ
ঘাট নির্মাণ করেন।
লালদিঘির ময়দান
:
পূর্বে চট্টগ্রাম
মেট্রোপলিটন পুলিশ সদর দপ্তরের পাহাড়ের পাদদেশ থেকে পশ্চিমে পরীর পাহাড়ের পাদদেশ
পর্যন্ত সমগ্র সমতল এলাকা সেকালে মিউনিসিপ্যাল ময়দান নামে খ্যাত ছিল। উনিশ শতকের
শেষার্ধে উত্তর-দক্ষিণ রাস্তাটি নির্মিত হলে মিউনিসিপ্যাল ময়দান দুভাগে ভাগ হয়ে
যায়। পূর্বাংশ সাধারণের খেলার মাঠে রূপান্তরিত হয়। মুসলিম উচ্চ বিদ্যালয়
স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হলে তখন সে মাঠ মুসলিম হাই স্কুল খেলার মাঠ নামে পরিচিত হয়।
এখন এ মাঠ লালদিঘির ময়দান। এ ময়দানকেই কেন্দ্র করে বিভিন্ন সভা সমিতির জনসভা
অনুষ্ঠিত হয়। এখানে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের জাতীয় এবং স্থানীয় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
লালদিঘির বলী
খেলা :
বলীখেলা এক ধরনের
কুস্তি। বল থেকে বলি। কুস্তিগীরদের চট্টগ্রামের ভাষায় ডাকা হয় বলী বা বলশালী।
চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ
মাসে চট্টগ্রামে বলী খেলার আয়োজন করা হয়। গ্রাম বাংলার লোকজ বলী খেলা এখন
চট্টগ্রাম শহরের অন্যতম জনপ্রিয় খেলা। চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ বলীখেলা অনুষ্ঠিত হয়
লালদিঘির ময়দানে প্রতি বাংলা সনের ১২ বৈশাখে। হাত পায়ের কসরত আর শক্তি দিয়ে
অপরজনকে মাটিতে ফেলে পিঠ ঠেকাতে পারলেই জিতে যান একজন বলী। ১৯০৯ সালে লালদিঘিতে
বলী খেলার প্রচলন করেন ব্যবসায়ী ও সমাজকর্মী আবদুল জববার সওদাগর। তাই জববারের
বলীখেলা নামেও অভিহিত হয় এ কুস্তি খেলা।
লালদিঘির বৈশাখী
মেলা :
বলীখেলা বা
কুস্তি খেলা উপলক্ষে লালদিঘির চারপাশে রাস্তাজুড়ে বসে চার-পাঁচ দিনের বৈশাখী
মেলা। খোলা আকাশ বা সামান্য ছাউনি দিয়ে পসরা সাজিয়ে বসে দোকানিরা। এসব দোকানে
যেসব দ্রব্য পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছে কুটির শিল্পের বিভিন্ন রকমের দ্রব্য,
ছোটদের খেলনাপাতির জিনিস,
নানা আকৃতির প্লাস্টিকের
পুতুল, বাঁশি, মুখোশ, ঘর সাজানোর জন্যে বিভিন্ন কারুপণ্য, তৈজষপত্র, মাটির পুতুল,
ফুল ও ফুলদানী, কাঠ, বাঁশ, বেত এবং মাটির তৈরি নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্যাদি, লোহার তৈরি দা, ছুরি, বঁটি, কোদাল, হামানদিস্তা, তাওয়া, খুন্তি, পিঠা বানানোর রকমারি খোলা আর ‘পুস’ নকশি হাড়ি
এবং নানাবিধ পুতুল। হস্তশিল্পজাত যেসব দ্রব্য মেলায় বিক্রয় করা হয় তার মধ্যে রয়েছে
পাটের শিকে, দোলনা, থলে, টেবিলম্যাট, বেতের চেয়ার
টেবিলসহ নানা ফার্নিচার সামগ্রী। এছাড়া ঐতিহ্যবাহী খাদ্যদ্রব্য, যেমন গজা, মোয়া, তিলের নাড়ু, মাঠা, ছোলা, মুড়ি, বাতাসা, খৈ, জিলাপি, মিষ্টি, বাঙ্গী, তরমুজ, ডাব নারকেলসহ মৌসুমী ফল, নানা প্রকার
মাছের শুটকি কেনাবেচা হয়। এর পাশাপাশি থাকে নাগরদোলা, ভ্যারাইটি শো, চরকি, সার্কাস এবং মেলার অন্যান্য অনুষঙ্গ। এ মেলায় বহু লোকের সমাগম ঘটে।
লালদিঘি পার্ক :
লালদিঘির পূর্ব,
উত্তর, দক্ষিণ ও মসজিদ সংলগ্ন পশ্চিম পাড়ে অত্যন্ত
শোভনভাবে নানারকম গাছ ও ফুলের গাছ দিয়ে সাজানো হয়েছে পার্ক। পার্কের দেওয়াল
ঘেঁষে উইলো ও দেবদারুর সারি। ভোর ৬টায় থেকে ৮টা, বিকেল ৩টা থেকে ৭টা পর্যন্ত পার্ক উন্মুক্ত
থাকে।
লালদিঘির
রাজনৈতিক ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব :
লালদিঘির ময়দান
জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। লালদিঘির ময়দানে
রাজনৈতিক সভা সমাবেশ জাতীয় গুরুত্ব বহন করে থাকে। একে ঘিরেই গড়ে উঠেছে
চট্টগ্রামের ব্যবসায় কেন্দ্র। পূর্ব ও উত্তর পাড়ে ব্যাংক, বীমাসহ বিভিন্ন হোটেল গড়ে উঠেছে এ বাণিজ্যিক
অঞ্চলে। দিঘির পাড় থেকে বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল করে। হাজার হাজার লোকের সমাগম
হয় এখানে। সদা কর্মচঞ্চল লালদিঘি এলাকা চট্টগ্রামের রাজনীতি, অর্থনীতি ও সংস্কৃতির এক প্রাণকেন্দ্র হিসেবে
গড়ে উঠেছে।
কিভাবে যাওয়া
যায়:
উক্ত দশর্নীয়
স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।