Chittagong Commonwealth War Symmetry চট্টগ্রাম কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি

 Chittagong Commonwealth War Symmetry চট্টগ্রাম কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি


কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি চট্টগ্রাম কমনওয়েলথ ওয়ার গ্রেভস কমিশনের একটি সৌধ যেটি সাধারণভাবে চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি নামে পরিচিত।

অবস্থানঃ
কমনওয়েলথ ওয়ার সিমেট্রি চট্টগ্রামের দামপাড়া এলাকায়, ১৯ নং বাদশা মিয়া সড়কে অবস্থিত। এটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে ২২ কিমি উত্তরে এবং চট্টগ্রাম বন্দরথেকে ৮ কিমি দূরে অবস্থিত। ওয়ার সিমেট্রির প্রতিষ্ঠাকালে এই এলাকাটি একটি বিশাল ধানের ক্ষেত ছিল, যদিও বর্তমানে এটি বেশ উন্নত এলাকা এবং শহরের প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত।

ইতিহাসঃ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনী চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি প্রতিষ্ঠা করে। যুদ্ধ চলাকালীন সময় সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ এবং ১৫২ নং ব্রিটিশ জেনারেল হাসপাতালের সুবিধার কারণে চট্টগ্রামে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মিত্র বাহিনী চতুর্দশ সেনাবাহিনীর একটি ক্যাম্প স্থাপন করে। হাসপাতালটি ডিসেম্বর ১৯৪৪ থেকে অক্টোবর ১৯৪৫ পর্যন্ত সক্রিয় ছিলো। সেই সময়ে এই ক্যাম্পে প্রচুর সৈন্যকে আহত অবস্থা থেকে সুস্থ করে দেশে পাঠানো হয়েছিল। আর যারা সেই জীবন যুদ্ধে পরাজিত হয়েছিল, তাদের সম্মানার্থে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পরবর্তী সময়ে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি দল এই সমাধিসৌধ প্রতিষ্ঠা করে। প্রাথমিকভাবে এই সমাধিতে সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে প্রায় ৪০০ মৃতদেহ সমাহিত করা সম্ভব হয়েছিল। এছাড়াও যুদ্ধ শেষে অতিরিক্ত মৃতদেহ লুসাই, ঢাকা, খুলনা, যশোর, কক্সবাজার, ধোয়া পালং, দোহাজারি, রাঙ্গামাটি, পটিয়া এবং অন্যান্য অস্থায়ী সমাধিস্থান থেকে এই সমাধিস্থানে স্থানান্তর করা হয়। তবে বর্তমানে এখানে ৭৩১টি সমাধি বিদ্যমান যার মধ্যে ১৭ জনের কোনো পরিচয় মেলেনি। এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নিহত জাতীয় বিদেশী সৈন্যদের মধ্যে (ওলন্দাজ এবং জাপানি সৈন্য) প্রায় ২০টি সমাধি বিদ্যমান। নাগরিকদের মধ্যে যুক্তরাজ্যের ৩৭৮ জন, কানাডার ২৫ জন, অস্ট্রেলিয়ার ৯ জন, নিউজিল্যান্ডের ২ জন, অবিভক্ত ভারতের (বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান) ২১৪ জন, পূর্ব আফ্রিকার ১১ জন, পশ্চিম আফ্রিকার ৯০ জন, বার্মার ২ জন, নেদারল্যান্ডসের ১ জন ও জাপানের ১৯ জন। পেশা অনুসারে এই সমাধিস্থলে সৈনিক ৫৪৩ জন, বৈমানিক ১৯৪ জন এবং নাবিক আছেন ১৪ জন। যুদ্ধকালীন সমাধি ছাড়াও বেসামরিক নাগরিকদের ৪টি সমাধি এ কবরস্থানে রয়েছে। এছাড়া এখানে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের (১৯৩৯-১৯৪৫) চট্টগ্রাম-বোম্বের একটি স্মারক বিদ্যামান। পঞ্চাশের দশকের প্রথমার্ধে নির্মিত এ সিমেট্রির বাইরের অংশে খোলা মাঠ রয়েছে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা এবং বিকেল ৩টা থেকে ৫টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্যে প্রবেশাধিকার উন্মুক্ত থাকে যা শীতকালীন ও রোজার সময় কিছুটা পরিবর্তন ঘটে থাকে।

বর্ণনাঃ
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে পাহাড়ি রাস্তার কিছুটা ঢালু আর কিছুটা সমতল ভূমিতে গড়ে উঠেছে এই সমাধি। সম্পূর্ণ সমাধি এলাকার পরিবেশ একই সাথে মনোরম, গুরুগম্ভীর এবং শান্ত। ওয়ার সিমেট্রির প্রবেশপথের মূল ফটক থেকে সামান্য পথ হেঁটে গেলেই চোখে পড়ে লাল ইটের গাঁথুনির দুটি ছোট গির্জা ও মেটাল গেট। হাতের ডান পাশে গির্জায় একটি মেমোরিয়াল বুক রাখা আছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতীয় বাণিজ্য তরীর প্রায় ৬৫০০ নাবিক ও লস্কর মারা যায় যাদের লাশের হদিস মেলেনি কখনো। তাদের নাম ও পদবি এই মেমোরিয়াল বুকে সংরক্ষিত আছে।  হাতের বাঁ পাশের গির্জায় রয়েছে সিমেট্রি রেজিস্ট্রার, যাতে লেখা রয়েছে সমাহিত সেনা সদস্যদের নাম, পদবী ও সংক্ষিপ্ত পরিচিতি সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। গেট থেকেই সমাধিস্থলের মাঝ বরাবর একটি অপূর্ব ক্রুশ চিহ্নিত বেদি চোখে পড়ে। তার পরই পূর্বদিকে আছে একটি প্রার্থনা কক্ষ। ওয়ার সিমেট্রির বাইরে খোলা মাঠ এবং সুন্দর বাগান আছে। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে গড়ে ওঠা এই সিমেট্রিতে চল্লিশ জাতের বৃক্ষরাজি রয়েছে। রয়েছে দেবদারু, গর্জন, মেহগনি, ইউক্যালিপটাস, পাম গাছ। এছাড়া গন্ধরাজ, বেলী, পাতাবাহার, লেনথানা, গোলাপ, লেটারলিফসহ কয়েক শতাধিক দেশী-বিদেশী ফুল গাছ সমাধিতে এক অসাধারণ স্বর্গীয় মোহের সৃষ্টি করেছে। সমাধিস্থলে চোখে পড়বে অতি যত্নে সংরক্ষিত কবরের সারি। প্রতিটি কবরের গায়ে লেখা আছে শহীদদের নাম-পরিচয়। বিকেলে অনেক পর্যটক পাহাড়ের কোলে দাঁড়িয়ে সমাধি দেখতে আসেন।

পরিদর্শন সংক্রান্ত তথ্যঃ
চট্টগ্রাম ওয়ার সিমেট্রি প্রতিদিন সকাল ৮:০০-১২:০০ ঘটিকার মধ্যে এবং বেলা ২:00-৫:00 ঘটিকার মধ্যে খোলা থাকে।

কিভাবে যাওয়া যায়:
উক্ত দশর্নীয় স্থানে যাওয়ার জন্য বাস বা অটোরিক্সা ব্যবহার করা যেতে পারে।

Post a Comment

Previous Post Next Post